নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সানোখালি গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মো: গোফরান মিয়া (৭৫) কে নিজ বাড়ির ছাদে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগে চাটখিল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। নিহতের বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মো: শাহজামাল মানিক বাদী হয়ে সন্ধ্যায় চাটখিল থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তিন দিন পরেও রহস্য উদঘাটন হয়নি, এটি কি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানাগুঞ্জন।
এদিকে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বিকেলে চাটখিলে নিজ গ্রামে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। নিহতের ছেলে সানোখালি গ্রামের মৃত হাবিব উল্যাহর ছেলে মো: আবুল হাসেম কে প্রধান আসামী করে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪-৫ জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার অপর আসামীরা হচ্ছে সানোখালি গ্রামের রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল, মো: জনি, মো: জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, নুপুর বেগম, টুনি বেগম ও মধ্য বদলকোট গ্রামের ঠাকুর বাড়ির কেরাম আলীর ছেলে মাসুদ আলম।
এ ঘটনায় নোয়াখালী পিবিআই ও চাটখিল থানা পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ময়নাতদন্ত ও জানাযা শেষে সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে নুর আলমের ব্যক্তিগত কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আবদুল গোফরানের চাটখিলে দ্বিতল বাস ভবনের ছাদ থেকে রক্তাক্ত মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
থানা দায়ের করা অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে গোফরান মিয়া স্বপরিবারে যক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছেন। তিনি গত ১০ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বাড়িতে আসেন। নিহতের ছেলে যুক্ত রাষ্ট্রের নাগরিক মানিক, নুর আলম, মেয়ে শোভা, বিজলি বলেন, তাদের বাবার ঢাকাতে ৭তলা বাড়ি ও নোয়াখালীর চাটখিলে প্রায় শত কোটি টাকার দালান বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে গোফরান মিয়ার স্বজন আবুল হাসেম, রেজাউল করিম রিংকু, কেয়াটেকার জহির ইকবাল, মো: জনি, জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, মাসুদ আলমকে গোফরান মিয়ার ঢাকা ও চাটখিলের সম্পত্তি ও বাড়ি দেখা শোনা ও ভোগ দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্ত ভোগ দখলকারীরা লোভের বষিভুত হয়ে সম্পুর্ণ সম্পত্তি আত্মসাত করার পায়তারা শুরু করেন।
২০১৮ সালে গোফরান মিয়া সম্পত্তির ও বাড়ির আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ চাইলে আসামীরা তাকে হিসাব না দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একধিকবার শালিস বৈঠকে মিমাংশার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সহায় সম্পত্তির হিসাব চাওয়ায় ২০১৮ সালের ২ মে গোফরান মিয়াকে অমানবিক ভাবে মার ধর করে আসামীরা। ওই ঘটনায় চলতি বছর ১২ মে আসামীদের বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা জজ¦ আদালতে গোফরান মিয়া একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে আবুল হাসেম. রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল সহ অন্যান্যরা গোফরান মিয়াকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকিও দিয়েছিল। এক পর্যায়ে গোফরান মিয়ার সহায় সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১৬ অক্টোবর গোফরান মিয়া চাটখিলের সানোখালি গ্রামের বাড়িতে আসেন। ১৭ অক্টোবর আনুমানিক সকালে ১০ টার সময় গোফরান মিয়া নাস্তা খেয়ে নিজ বাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে যান।
পূর্ব বিরোধ ও মামলার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গোফরান মিয়াকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে, লোহার রড ডুকিয়ে হত্যা করে তার পরনের লুঙ্গি দিয়ে ছাদে সিঁড়ির রডের সাথে মৃত দেহ বেধে রেখে পালিয়ে যায় দূবৃত্তরা। এ ঘটনার ১ ঘন্টা পর বাড়ির পাহারাদার জহির ও নিহতের স্বজন জহির ইকবাল চাটখিল থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
সোমবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিহত গোফরানের ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশে এসে এই মামলা দায়ের করেন। গোফরানের মেয়ে রুবিনা ইসলাম ও নুর আলম বলেন তাদের শত কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্যই তার বাবাকে আসামিরা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। তারা তার বাবার খুনিদের ফাঁসির দাবী করেছেন। ঘটনার পর থেকে মামলার অনেক আসামী এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় নোয়াখলা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল সোহাগ বলেন আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটি হত্যাকান্ড। বাকিটা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।
হত্যা কান্ডের পর সোমবার ও মঙ্গলবার পিবিআই নোয়াখালীর দুইটি টিম পৃথক পৃথক ভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেছেন।
পিবিআই কর্মকর্তা বসু দত্ত জানান যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন সেহেতু এ ব্যপারে এখনি কিছু বলা যাচ্ছেনা। এ হত্যা কান্ডের তদন্তভার পিবিআই পেলে অধিকতর তদন্ত করা হবে।
চাটখিল থানা ওসি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি হত্যা না অন্যকিছু ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে গভীরভাবে তদন্ত চলছে। নিহত গোরফানের দুই স্ত্রী ও সন্তানরা রয়েছে।
Leave a Reply