হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের সুখচর গ্রামে বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রীসহ আরো ৫ জন আহত হয়েছে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর দিকে আহতদের হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত হলেন-সুখচর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আব্দুল কদ্দুছ (৫৪)। পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ওই গ্রামের আব্দুল কদুছ মিয়া সাথে একই গ্রামের বুলু দাশ, তরুন দাশ, অরুন দাশ গংদের সাথে বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বুলু দাস গংদের পক্ষ অবলম্বন করে গ্রামের শাহজাহান মিয়া, জাহির মিয়া, ফরিদ মিয়াসহ আরো কয়েকজন আজ মঙ্গলবার আড়াইটার দিকে আব্দুল কদ্দুছ মিয়া পুকুরে মাছ মারতে যায়। এ সময় আব্দুল কদ্দুছ মিয়া, তার স্ত্রী ও সন্তানরা এসে তাদের বাধা দেন।
এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজনই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয় মুরুব্বীয়ান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে আব্দুল কদ্দুছ মিয়া মারা যায়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে নিহত আব্দুল কদ্দুছের স্ত্রী সুন্দরনেছা (৫০) ও ছেলে আছকির মিয়া (২৫)সহ ৫জনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত আব্দুল কদ্দুছের ছেলে আছকির মিয়া জানান, তাদের সাথে একই এলাকার বুলু দাশ, তরুন দাশ, অরুন দাশ গংদের বাড়ি জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি তাদের পক্ষ নেন একই গ্রামের শাহজাহান মিয়া, জাহির মিয়া ও ফরিদ মিয়া। আজ বেলা ২টার দিকে শাহজাহান মিয়া তার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের পুকুরে মাছ মারতে আসে। এ সময় আমরা বাঁধা দিলে তারা আমাদের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং আমার বাবা আব্দুল কদ্দুছকে ফিকল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে আরএমও ডাঃ শামীমা আক্তার জানান, আব্দুল কদ্দুছ মিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম ও হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আমরা তাদের গ্রেফতারের জন্য অব্যাহত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। অপর দিকে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা হরিপুর গ্রামে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কামাল মিয়া (২৫) নামে এক যুবককে হাওরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার স্বজনদের বিরুদ্ধে। হত্যার পর দুই নারী লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত কামাল মিয়া উপজেলার হরিপুর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে।
সূত্রে জানা যায়- উপজেলার হরিপুর গ্রামের বজলু মিয়ার ছেলে ফজল মিয়ার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল একই গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে সালমান মিয়ার। গত ৬ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সালমান মিয়ার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ফজল মিয়ার বুকে আঘাত করেন। গুরুত্বর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
এ ঘটনায় গত ১০ নভেম্বর নিহত ফজল মিয়ার বাবা বজলু মিয়া বাদি হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে বানিয়াচং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সালমান মিয়াসহ দুইজন এখনও জেলে রয়েছেন। বাকিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। সোমবার ফজল মিয়া হত্যা মামলার ১২ নাম্বার আসামী ওই গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে কামাল মিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ নিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে আসেন দুই নারী। একজন নিহত কামল মিয়ার মা ও অপরজন খালা বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সহকারি পুলিশ সুপার (বনিয়াচং সার্কেল) শেখ সেলিম সোমবার রাত ১০টায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে বলেন- ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। হাসপাতালে নিহতের স্বজনদের কাওকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মামলা করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply