যে কারনে আমি সাংবাদিক হলাম

ডেস্ক নিউজ:: আমি কখনও ভাবিনি সাংবাদিক হবো। কেন যে সাংবাদিকতার খাতায় নাম লেখা হলো। কেন আমি সাংবাদিক হলাম।কি পেলাম এ পেশায় । আর কি হারালাম। আমার হয়তো কৃষক হওয়ার কথা। কারণ, বাবা ছিলেন একজন সাধারন কৃষক। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য প্রবাসী আর না হয় কৃষক। পরিবারে চাকুরীজীবিও আছেন তাদের পথে স্বপ্ন দেখি। জেদ ধরে আজ আপাদমস্তক সাংবাদিক। সাংবাদিক হিসেবে আমি যশ-খ্যাতি যথেষ্ট পেয়েছি। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। পেশাগত জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি। সাংবাদিকতার জন্য হয়রানির শিকার হয়েছি। মামলায় শিকার হয়ে বেশির ভাগ জয়ী হয়েছি। আর একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।
২৫ বছরের পেশাগত জীবনের প্রথম দুইদিন জেল খেটেছি ।অপরাধ ছিল একটি সংবাদের জন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য নিয়েছিলাম। সাংবাদিকতার জন্য প্রশাসন ও রাজনীতির রোশানলে পড়েছি বারবার। তবু হাল ছাড়েনি। কেন জানি আমার কখনও প্রবাসী হওয়ার ইচ্ছে জাগেনি। ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় পার্সপোর্ট করেও কুয়েত যাওয়া হইনি।তাই লেখা পড়ার প্রতি মনোযোগি হলাম।মা-বাবার একমাত্র সন্তান হিসাবে ছোট বেলায় ছিলাম বিলাসি মনোভাবের। বাবা থাকা অবস্থায় কোন দিন কষ্ট কি জিনিস বুঝি নাই। বাবা মারা যাবার পরে যেটুকু হয়েছে মায়ের জন্য। আমার মা খুবই দায়িত্বশীল লেখা পড়ার জন্য। স্কুল কলেজ কামাই করলেই মায়ের বকুনি ছিল অপরিসীম।মায়ের জন্যই আমি লেখাপড়া শিখেছি। পরিবারের কোনো ইচ্ছে আমার ওপর কখনও চাপিয়ে দেয়া হয়নি। তাই আমি জীবনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের মতো। নবীগঞ্জ কলেজে পড়া অবস্থায় আড্ডাবাজ ছিলাম। তার মধ্যে ছিল বন্ধুবর হারুন আর মুকিত। আড্ডাবাজ হারুন মাতিয়ে রাখতো সারাক্ষণ। খেলা আর আড্ডাবাজি ছিল তার কাজ। ১৫ বছর হয় হারুন নেই আমাদের মাঝে। একদম চুপচাপ চলে গেছে এতদিন। বয়সে আমার ছোট হলে অকালে হারুনের বিদায় ভুলতে পারি না। সেটা আরেক কাহিনী। ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম মনোযোগি। দিনরাত বই নিয়ে বসে থাকি। ক্যারম খেলে রাত কাটতো মাঝে মধ্যে।
১৯৯০ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা শেষ। গ্রামের বাড়ি সিট ফরিদপুর গ্রাম ছেড়ে আউশকান্দি বাজারে আসা শুরু হয়। আউশকান্দি র.প. উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি । বাজারের অনেক দোকানে বসে আড্ডা দেই। তার মধ্যে ছিল মুক্তা টেইলার্সের ছোট দোকান। ঐখানে বসে খবরে কাগজ পড়ার নেশা।ঐ দোকানের পাশে ছিল মরহুম মাহমুদ মেম্বার সাবের পার্টসের দোকান। তিনি ছিলেন পত্রিকা পড়ার ফোঁক। প্রতিদিনই আজকের কাগজ পত্রিকা আসতো তার দোকানে। একবার ঐ দোকানে গিয়ে পত্রিকা না পড়লে পেটের ভাত হজম হতো না। আমরা কয়েকজন তরুন ছাত্র চাঁদা করে বাংলাবাজার পত্রিকা নিয়মিত রাখতাম মুক্তা টেইলার্সে। শুরু হলো ইরাকের কুয়েত দখল আর উপসাগরীয় যুদ্ধ। খবরের কাগজের কি মুল্য। প্রতিদিনই দল বেঁধে পত্রিকা পড়ার আড্ডা হতো । মুক্তা টেইর্লাস আর মেম্বার সাবের দোকানে।
ওই পত্রিকা পড়েই সাংবাদিক হওয়ার শখ জাগে। বাংলাবাজার পত্রিকার জনতার মঞ্চ নামে একটি পাতা ছিল। এলাকার সমস্যা নিয়ে লিখলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জবাব দিতেন। আর শিক্ষা পাতায় অংক বা প্রশ্ন করলে উত্তর ছাপা হতো স্কুল ও নিজের নাম সহ। আমি এই দুটি পাতায় লেখালেখি শুরু করলাম। একদিন একটি অংক নাম সহ ছাপা হলো। ক্লাসে অংকের রনেন্দ্র স্যার ডুকলেন হাতে বাংলাবাজার পত্রিকা। নাম ধরে ডাকলেন। উঠে দাড়ালাম স্যার সামনে যেতে বললেন। ভয়ে ভয়ে হুবুজুবু হয়ে গেলাম। ছেলে মেয়ে সবার সামনে বললেন আমাদের সাংবাদিক সাব। এই দেখ তাইনের অংক পেপারে ছাপা হইছে। কিছুটা লজ্জা পেলেও।স্যারের কাছে কিছু সম্মানিতও হলাম । স্কুলে নাম ছাপা হবার জন্য । স্যার চলে যাবার পড় সবাই আমাকে নিয়ে একটু মজা করলো। কেউ কেউ গর্ব করলো। বেশির ভাগ আমাকে ধন্যবাদ দিল স্কুলের নামসহ পেপারে চাপার জন্য।কয়েকটি লেখা ছাপা হলো।সাংবাদিক গুরু মতিউর রহমান চৌধুরীর দৃষ্টি পড়ে আমার উপর। তিনি হলেন বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক।তিনি হলেন বাংলাদেশে সাংবাদিক গড়ায় কারিগর।
যে কথা আজকে লিখবো ।
সালটা হলো ১৯৯৫। এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি শেষ। টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র। আশা-ইচ্ছা থেকে ডাক এলো সাংবাদিক হওয়ার। কারন এ পেশায় মানুষ বেশি সম্মান করে । স্বপ্ন অনেক টাকা বেতন পাবো। ছাত্র রাজনীতিতে কাবু হয়ে পড়েছি কলেজ চত্বরে। এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময়। আমি ঢাকায় গেলাম। মতি ভাইয়ের সাথে দেখা করবো। জীবনের প্রথম ঢাকা যাত্রা। সকাল ৮টায় শেরপুর থেকে মিতালি বাসে উঠি। ৫ঘন্টা পর ভৈরব ফেরি ঘাটে গেলাম।সেখানে ফেরিতে মেঘনা নদীর দেখা।প্রায় দুই ঘন্টা পরে ফেরি পার হলাম। আবারো যাত্রা শুরু হলো। মনে হয় রাত ৮টায় সায়েদাবাদ নামি।একটি বেবি যোগে সিলেটিদের প্রিয় জায়গা ফকিরাপুলে গেলাম। আবাসিক হোটেল খুঁজতেছি। হঠাৎ দেখি সিলেট বডিং লেখা একটি হোটেল। বয়সে তরুন আর জীবনের প্রথম ঢাকা।
সিলেট শব্দটি দেখে মনের মধ্যে খুব আনন্দ পেলাম। রাত ১০টা ঐ হোটেলে একটি সিট পেলাম থাকার জন্য। মনে হয় ২শ টাকা ছিল রোম ভাড়া। রমজান মাস ছিল । রোজা রাখার অভ্যাস ছোট বেলা। ম্যানাজার কে বললাম রাতে সেহেরী খেতে হবে ডাকবেন। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রোমে গেলাম। রাতে কি আর ঘুম আসে। সিলেটি ভাষায় বলে উলুস(ছাড়পোকা)আক্রমন। কি করবো এত রাতে আর কোথায় যাই। সারা রাত বসে কাটালাম। সেহেরীর সময় ম্যানাজার কে বললাম ছাড়পোকার কথা। তিনি উত্তর দিলেন এটা আমাদের হোটেল ঐতিহ্য।আমি এত কিছু না বুঝে বাহিরে সেহেরি খেলাম।সকাল ৮টায় হোটেল ছেড়ে ছুটেচলা। কিছুই চিনিনা।ফকিরাপুল মোড়ে গিয়ে কয়েকজন রিক্সা চালককে জিজ্ঞেস করলাম। বাংলাবাজার পত্রিকা অফিস কেউ চিনেন না। পরে একজন বেবি চালক চিনলেন। তিনি আমাকে নিয়ে তেজগাঁও নাবিস্কোর পাশে । বাংলাবাজার পত্রিকা অফিস নিয়ে গেলেন। ৮০ টাকা ভাড়া নিলেন।গেইটে দাড়োয়ান আটকে দিলেন।পরিচয় দিলাম আমি নবীগঞ্জের লোক।
মতি ভাইয়ের বাড়ি আমার এলাকায় । তাইনের সাথে দেখা করতাম। দাড়োয়ান গেইট ছেড়ে দিল।ভিতরে গিয়ে দেখা হলো জালাল ভাই,তোফায়েল ভাই আর নওশাদ ভাইয়ের সাথে। তারা বাংলাবাজার পত্রিকার বড় কর্তা। তিনজনের বাড়িই নবীগঞ্জ। আমারে তারা আদর আপ্যায়ন করেন । ঐদিন অনেকক্ষন বসে আসলাম মতি ভাইয়ের দেখা পেলাম না। পরে লতু ভাই নামে একজনের সাথে পরিচয় হলো। তিনি সহ সবাই বললেন মতি ভাই আজকে অফিসে আসবেন না। কি করবো মনোকষ্ট নিয়ে ফিরতে হবে। সবাই আদর করে বললেল তুমি ছোট মানুষ চলে যাও রাত্র হয়ে যাবে। ভাবলাম আমার পকেটে টাকা নেই।যা আছে থাকলে আর বাড়ি ফিরতে পারবো না। তারাতারি বেবি যোগে সায়দাবাদ আসলাম।বাসে উঠে বাড়ি চলে আসলাম। ঐ যাত্রায় স্বপ্ন পুরুষ সম্পাদক মতি ভাইয়ের সাথে দেখা হলো না। মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি আসা ।তাই বলে কি সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন অকালে নষ্ট হতে পারে ? এক পর্যায়ে মুক্তা টেইলার্সের মুশাহিদ ভাই আমাকে সাংবাদিক হবার পথ দেখালেন। আমাদের এলাকার বাজার সঈদপুর। এখানে সাংবাদিক শাহেদ বিন জাফর ভাইয়ের বাড়ি।তিনি শ্রীমঙ্গলের নাম করা কাগজ দৈনিক খোলাচিঠির ব্যুারোচীফ। তার কাছে পাঠালেন । বাসার সামনে বড় সাইন বোর্ড। বরাক নদীর তীরে তার বাসা।আমি আমার বাই সাইকেলটি নিয়ে তার কাছে গেলাম। বললাম ভাই সাংবাদিক হবো। আমাকে মুশাহিদ ভাই পাঠিয়েছেন। তিনি আমাকে এক এক করে সাতদিন নিলেন। কিন্তু কোন সঠিক দিক নির্দেশনা পেলাম না। হতাশ হলাম, কি করবো..!শাহেদ বিন জাফর ভাই রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।
তাই ভাবলাম সাংবাদিকতা নিয়ে রাজনীতি নয়। সাংবাদিক হবো এটাই হবে প্রতিশোধ । মুশাহিদ ভাইকে বললাম, আমাকে সাংবাদিক হতে হবে। তিনি বললেন সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ! জেদ জাগলো কেন? তুই তো ছাত্র রাজনীতিতে ব্যস্ত। ঘটনা খুলে বললাম। ঠাণ্ডা মাথার লোক তিনি। অপমান আর জেদ থেকে কিছু হতে পারে মন্তব্য করে বললেন, কাল আসিস। ভেবে দেখবো কী করা যায়। তখন তো পত্রিকাও কম। কোথায় সুযোগ পাবো। মাথা থেকে এটা সরছে না। হঠাৎ একদিন দেখি বাংলাবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। চুনারুঘাট থেকে সাপ্তাহিক তরফবার্তা বাহির হবে। জটপট হাতে একটি সাদা কাগজ নিলাম।আবেদন লিখে ডাক যোগে পাঠালাম।সাথে আমাদের আউশকান্দি র.প,উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যাপীঠে তখনকার ইউএনও দিলীপ কুমার চৌধুরী বিদায় অনুষ্ঠান হলো। এ খবরটি সাদা কাগজে হাতে লিখলাম ।পরদিন সংবাদটি ডাক যোগে পাঠালাম। আমার যে সাংবাদিক হতেই হবে। এটা আমার প্রতিজ্ঞা। তরফবার্তা পত্রিকা চুনারুঘাট থেকে বের হয়। কাউকে চিনিনা, জানিনা। পছন্দ হলে ওরা ছাপতে পারে।
ডাকে পাঠিয়ে অপেক্ষা করা। ছাপলে তো ভালো। না হয় আবার কোথাও পাঠাব। ৭ দিনের মাথায় একটি পত্রিকা ডাকযোগে আসলো। পিয়ন বাবু আমার কাছে ডাকঘর থেকে পত্রিকাটি দিলেন। খুলে পড়ে দেখলাম আমার সংবাদটি দুই কলামে ছাপা হয়েছে। তা আবার বাই লাইন নামে ছাপা হয়েছে। কি যে খুশি ভূ-দৌড় মুক্তা টেইলারে। মুশাহিদ ভাই সংবাদ ছাপা হয়েছে। তিনি আমাকে তখনকার সময়ে বাজারের সেরা জলযোগ রেস্টুরেন্টের চা খাওয়ালেন। শুরু হলো সাংবাদিকতার পথ চলা।তরফবার্তা সম্পাদক ফারুক উদ্দিন চৌধুরীর সাথে পরিচয় হল।তার সাথে দেখা হয় একবছর পর প্রতিনিধি সম্মেলনে। পরে জানলাম তিনি আমার চাচা বর্তমান সচিব সিরাজুল ইসলামের সহপাঠি। তাই তিনি আমাকে আদর করতেন। এদিকে এসএসসি পাশের পরে নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলাম।। পরিচয় হল নবীগঞ্জ শহরের বিশ্ব সংবাদ বিতানের মুশাহিদ ভাই ও তার বাবার সাথে। তিনিও সাংবাদিক না হলেও সংবাদ পত্র বিক্রি করেন। সব সংবাদপত্র তার কাছে আসে।হোটেল আরজুর সামনে টং দোকানে পত্রিকা নিয়ে বসেন। শুরু হলো তার দোকানে পত্রিকা পড়ার আড্ডা। কোন পত্রিকায় কোন সংবাদ ছাপা হয়েছে। এরই মধ্যে জাকেরপার্টির আল-মোজাদ্দেদ নামে একটি পত্রিকা বাজারে আসে।সিভি ও কয়েকটি সংবাদ লিখে ডাকে পাঠিয়ে দিলাম আল-মুজাদ্দেদ অফিসে। এর তিনদিন পরই দেখলাম আমার সংবাদ ছাপা হয়েছে। খুশিতে প্রাণ ভরে গেল। পত্রিকাটি খুব একটা চলতো না ।
আবেদন করলাম। সংবাদও ছাপা হচ্ছে। কাজ করার কয়েক মাস পর একদিন সন্ধ্যার পর মগবাজার সংলগ্ন ওয়ারলেস অফিসে গেলাম। কীর্তি কারবার দেখে পছন্দ হলো না। দ্রুত অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। সেদিনই আল-মোজাদ্দেদ পত্রিকায় কাজ বন্ধ করে দিলাম। এরই মধ্যে তরফবার্তা ও খোয়াই পত্রিকার আইডি কার্ড পেলাম। তখন হবিগঞ্জের জনপ্রিয় বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক খোয়াই পত্রিকায় নিয়মিত লিখি। পড়াশুনার চেয়ে সাংবাদিকতায় মনোযোগী হয়ে পড়লাম। অনেক উপদেশ দিয়ে বললেন, এ পেশা দরকার নেই। এটা করলে, না খেয়ে মরতে হবে। আমলে নিলাম না। আরও এগুতে থাকলাম। তবে, আমার আব্বা আম্মা আমাকে কোন বাঁধা দেননি। তখন ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট সুবিধা নেই।বাড়ি নবীগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলো মিটার দুরে।সংবাদ সংগ্রহের পর প্রচন্ড কষ্টে তা সরবরাহ করতে হয়। কারেন্ট নিউজতো পাঠাতে হবে, তা কিভাবে পাঠাবো সমস্যা জটিল। ফিচার-সমস্যা, ক্রাইম সংবাদ গভীর রাতে কাগজে লিখে পরদিন পোস্ট অফিসে গিয়ে ডাকে পাঠাতাম। কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবস্থাও ছিল না। পরে নবীগঞ্জ সদরে সিনিয়র সাংবাদিক খেজুর ভাইয়ের কুরিয়ারে দোকানে যেতাম।
আবার কখনো যেতাম না নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল।কারেন্ট নিউজ সংগ্রহের পর কখনও টিএন্ডটি অফিসে । কখনও আবার হবিগঞ্জ অথবা মৌলভীবাজার গিয়ে ফ্যাক্স করতাম।। বুক থরথর করছিলো-প্রথম যেদিন টেলিফোনে সংবাদ প্রেরণ করি। তখন হ্যান্ড রাইটিং ব্যবস্থা ছিল। শুধু বলে যেতাম। ঢাকার পত্রিকা অফিসে তা লিখে নিতো। দিনের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ কোন সংবাদ পেলে নিয়ে যেতাম হবিগঞ্জ অথবা মৌলভীবাজার । এমন কি সিলেট গিয়ে নিউজ প্রেরন করেছি। নবীগঞ্জ শহরে ফ্যাক্স আসে অনেক পরে ৯৭-৯৮ সালে। তখন নবীগঞ্জে প্রথম আল ফালাহ ফোনের দোকানে ও পরে করিম রেষ্ট হাউজে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোহাম্মদ আলী ভাইয়ের দোকানে ফ্যাক্স মেশিন আসে। প্রতি মিনিট ফ্যাক্স ৩৫ থেকে ৩০ টাকা করে নেয়া হতো।সিলেট ও মৌলভীবাজার গেলে ১৫ টাকা মিনিট ছিল।
বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে সংবাদ পাঠিয়ে কখনও রাত ২-৩টায় বাসায় পৌঁছতাম। গাড়ির অপেক্ষায় বসে থাকতাম নবীগঞ্জ নতুনবাজার মোড়ে। বেবি করে আউশকান্দি বাজারে এসে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরতাম। এখন আর অপেক্ষা করতে হয় না । গাড়ি বাড়ি আসে অথবা মোটর সাইকেলে আসি।…কাজ চলছে। তেজগাঁও থেকে প্রকাশিত বাংলাবাজার পত্রিকা তখন ব্যাপক প্রচারিত। এ পত্রিকার প্রতিনিধি তোফাজ্জল হোসেন ভাই । তার সাথে পরিচয় হলো তিনি ছিলেন একজন ডিট রাইটার ও সাংবাদিক। তিনি তরুন বয়সে অনেক সংবাদ প্রেরনে সহযোগিতা করেছেন। এর পর পরিচয় বাংলারবানীর ফখরুল ভাই ও তখনকার সময়ের জালালাবাদের সাইফুল ভাইয়ের সাথে। এই দুইজন সহযোগিতা করেছেন নিউজ প্রেরনে সব সময়।
এসময় দৈনিক ভোরের কাগজে পত্রিকা ছেড়ে মতিউর রহমান চলে গেলেন। তিনি নতুন পত্রিকা করলেন প্রথম আলো।
ঐ পত্রিকার প্রতিনিধি সেলিম ভাই প্রথমআলোয় চলে গেলেন। আমি তখন ভোরের কাগজে আবেদন করেছি । আমার সংবাদ ভোরের কাগজে ছাপা হলো বাই লাইন নামে। একই সময়ে বাংলাবাজারে সংবাদ পাঠাচ্ছি সেখানে নামে প্রচুর সংবাদ ছাপা হলো। ১৯৯৮ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ট্যাবলয়েড পত্রিকা হিসেবে বাজারে এলো দৈনিক মানবজমিন। আমি আনোয়ার হোসেন মিটু ভাই ও তোফাজ্জুল হোসেন ভাই এক সাথে নিউজ পাঠাই। প্রথমে তিন জনের নিউজ ছাপা হতো। সুপারিশ নিয়ে অফিসে গিয়ে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলাম। মফস্বল বিভাগ এর প্রধান মহিবুল হোসেন জিতু ভাই ও শামীমুল হক শামীম (বর্তমানে মানবজমিনের নির্বাহী সম্পাদক) ভাই অফিসে দেখা স্বাক্ষাত হলো অনেক কথা হলো। মফস্বল বিভাগ থেকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া হলো। মানবজমিন পত্রিকায় কাজ করার তিনমাসের মাথায় আইডি কার্ড ও নিয়োগ পত্র পেলাম।
পেশা হিসেবে দিনরাত ছুটছি পথে-প্রান্তরে।
আমার সংবাদ ফ্লুইড দিয়ে মুছে নিজের নাম লেখে অনেক সহকর্মী ফ্যাক্স পাঠাচ্ছেন তাদের পত্রিকায়। এরপর সাংবাদিকতা ও গনযোগাযোগ বিভাগে ডিপ্লোমা পরীক্ষা দিলাম। উত্তীর্ণও হলাম। কিন্তু ভর্তি আর হয়ে উঠা হলো না। নবীগঞ্জ কলেজে ভর্তি হলাম । কোন বেতন নেই। পকেটের পয়সা খরচতো হচ্ছেই। ৩-৪টা টিউশনি করি, তা পত্রিকার পেছনে খরচ হয়। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা থেকে সর্বপ্রথম লাইনেস বাবদ সামান্য টাকা পেলাম । মনটা খুশি হলো কিছু সম্মানী পেলাম। এতো পরিশ্রম, টাকা নেই। তারপরও শান্তি পেলাম, কিছুতো পেয়েছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বেশি পাবো। নিজেকে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বেছে নিলাম। দিনরাত ছুটে চলা। দৈনিক মানবজমিনে ৩বার সেরা প্রতিনিধি মনোনীত হই। টানা দশ বছর দৈনিক মানবজমিনে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি।
সেই তো সে দিনের কথা। তারপর দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল ২৫ টি বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে আছি ‘সাংবাদিকতা’ পেশার সঙ্গে। এখন পেশা বলতে এটিই। এতো দিনে পেশাটি সম্পর্কে কতটুকু জেনেছি, তা আমি নিজেও জানি না। মনে হয় আমি এখনও শিক্ষানবিশ রিপোর্টারই রয়ে গেছি। তারপরও এই পেশাটির সঙ্গেই থাকতে চাই।
সাংবাদিকতায় আমার কোন ওস্তাদ নেই। শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু। পেশার প্রতি একাগ্রতা,। নতুন নতুন খবরের পিছনে ছোটা ।
আর লিখতে পারার কারণেই মাত্র তিন’মাসের মাথায় হিসাবে নিয়োগ পাই। দীর্ঘ দিন তরফ বার্তা পত্রিকায় আমি কাজ করেছি। পত্রিকাটির ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে । সম্পাদক হয়তো বা আমার দায়িত্বশীলতার কারণেই অতি অল্প সময়েই আমাকে ভ্রাম্যমান প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
আমি ২০০৫ সালে দৈনিক প্রথমআলো প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করি। এছাড়া আমি দৈনিক আমাদের সময়,ভোরের কাগজ,বাংলাবাজার পত্রিকা, দিনকাল,ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ২০০০,অপরাধ চিত্রে কাজ করেছি। হবিগঞ্জের প্রথম দৈনিক প্রতিদিনেরবানী, দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস,হবিগঞ্জ সমাচার, স্বাধীকার,প্রভাকর পত্রিকায় আর সিলেটের প্রাচীন পত্রিকা সিলেট কণ্ঠ ও জালালাবাদ, শ্রীমঙ্গলের দৈনিক খোলাচিঠি, মৌলভীবাজারের পাতাকুড়ির দেশ পত্রিকায় কাজ করেছি।
বর্তমানে আমিঃ
দৈনিক সমকাল,দৈনিক সবুজসিলেট ও দৈনিক খোয়াই পত্রিকায় কর্মরত আছি। এবং অনলাইন দৈনিক ইউরোবাংলাসিলেটের সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।
সাংবাদিকতার স্বীকৃতিঃ
সাংবাদিকতা জীবনে আমি ২০১৪ সালে জানুয়ারীতে জাতীয় ভাবে স্থানীয় সরকার এ্যাওর্য়াড-২০১৩-পেয়েছি । জাতীয় পিআইবি মিলনায়তনে স্থানীয় সরকার এ্যাওর্য়াড-২০১৩ সম্মাণনা ক্রেষ্ট , সনদ পত্র ও নগদ টাকা প্রদান করা হয়।
এছাড়া আমি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা থেকে পরপর ৩ বার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি নির্বাচিত হই ও সম্মাননা পাই । ১৯৯৫ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে প্রকাশিত জন নন্দিত সাপ্তাহিক তরফবার্তা পত্রিকা কর্তৃক জেলার শ্রেষ্ঠ উদিয়মান তরুন সাংবাদিক নির্বাচিত হই।
সিলেটের দৈনিক সবুজসিলেটের সেরা প্রতিনিধি হিসাবে তিনবার নির্বাচিত হই।
২০০৫ সালে নবীগঞ্জ এর সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ আমাকে শ্রেষ্ঠ ক্রিড়া সাংবাদিক হিসাবে পুরুস্কার প্রদান করেন।
২০১৪ সালে ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেনের তত্বাবধানে সাংবাদিকতায় ৬মাস ব্যাপী ফেলোশীফ গ্রহন করি।
২০১২ সালে ডেনমার্কের সাংবাদিক হোসে মরিও ও জাপানিজ কাউ সি সং এর নেতৃত্বে একদল বিদেশী সাংবাদিকের অধীন
প্রশিক্ষন গ্রহন করি এবং বিশেষ এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে স্থানীয় সরকারে উপর সরজমিন রির্পোর্ট করার জন্য ৭দিনের জন্য রাজশাহী ভিজিট করি
সেখানে সেরা রির্পোটিং এর জন্য সেরা সাংবাদিক নির্বাচিত হই।
২০১৫ সালে সাহসি সাংবাদিকতার জন্য শিক্ষাবিদ মুহিবুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি পদক ও বর্ণমালা সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মাননা পদক লাভ করি।
এছাড়া আরো অনেক ছোট ছোট সংবর্ধনা ও সম্মাননা পেয়েছি।
এছাড়া আমি সাংবাদিকতা জীবনে পিআইবির ট্রেনিংসহ ২০টির মতো ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছি ও সনদ পত্র অর্জন করেছি।
সেই অভিজ্ঞতা মলাটবদ্ধ..করেছি। মানুষের ভালোবাসায় কয়েকবার সম্মানিত হয়েছি সাহসি সাংবাদিকতার জন্য। আবার কারো জেলাস চোখ লাল-সবুজ। আমার সাদাকালো চোখে নিজের কাহিনীর বর্ননা। আমি এ পেশায় কত বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি । কতই কাছের বন্ধু হয়েছে পর আবার দুরের বন্ধু হয়েছে আপন। সমাজে কারো শত্রু আবার কারো মিত্র হয়েছি। আর রাজনীতিবিদদের #চক্ষুশোল হয়েছি সংবাদ লিখতে গিয়ে। রোশানলে পড়ে মামলা আর হামলার শিকার হয়েছি। ছাত্র জীবনে বরাবরই দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল রাজনীতিতে থাকবো। নাকি আসলেই পুরোদস্তুর সাংবাদিক হবো। আমার স্বপ্নের আঁতুড়ঘরেই মৃত্যু হতো। এই বিগত ২০১৬ সালের ২৭ আগষ্ট সড়ক দূর্ঘটনা থেকে ভাগ্য সহায় বলে বেঁচে আছি। এ যেন এক বিস্ময়কর ঘটনা। যেমন প্লেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার মতো। সাংবাদিকতার শুরুতে গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে চলেছি। টাকা-পয়সা কিছুই নেই। না খাওয়া অবস্থায় রির্পোট করেছি। এখনও লিখে যাচ্ছি। আশাবাদী যতদিন বাঁচবো চলবে।
লেখকঃ
এম,এ আহমদ আজাদ
প্রতিনিধি-দৈনিক সমকাল/ দৈনিক সবুজসিলেট/দৈনিক খোয়াই
সম্পাদক- অন লাইন দৈনিক ইউরোবাংলা সিলেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা