নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ;হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার  বড় ভাকৈর ইউনিয়নের বড় ভাকৈর গ্রামে এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।  এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
 শুক্রবার( ০৯ মে) সকাল প্রায় ৭টা থেকে ৮ টার মধ্যবর্তী সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার বড় ভাকৈর গ্রামের জামাল মিয়া ও  রুবিনা বেগম গত  প্রায় এক মাস পূর্বে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি উভয়েরই দ্বিতীয় বিবাহ ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতের খাবার শেষে স্বামী-স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েন।
 সকাল ৭ টায় জামাল মিয়া ঘুম থেকে উঠে বাইরে যান। পরবর্তী সময়ে, আনুমানিক ৮ টায় ঘরে ফিরে এসে তিনি দেখেন তার স্ত্রী ঘরের ছাদের লিংটারের রডে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছেন। সাথে সাথেই চিৎকার করলে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৌশিক মল্লিক ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “বিয়ের পর থেকে ওদের সংসারে কোনো বড় ঝামেলা দেখিনি। রুবিনা কিছুটা চুপচাপ প্রকৃতির ছিলেন। হঠাৎ এমন মৃত্যু মানা যায় না।
এসআই কৌশিক মল্লিক,সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে, তবে এটি আত্মহত্যা না অন্য কিছু  ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নবীগঞ্জে এক মাস আগে বিবাহিত নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ রক্ষার দাবিতে নবীগঞ্জে সুধী সমাজের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে ‘হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন’-এর আয়োজনে ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সার্বিক সহযোগীতায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এটিএম সালাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ছনি আহমেদ চৌধুরী।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের উপদেষ্টা শফিকুল বারী আওয়াল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু, হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি পিষুয চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সদস্য কায়সার আহমেদ চৌধুরী জনি, হাসবী সাঈদ চৌধুরী, ফরিদুজ্জামান রনি, তাজুল ইসলাম রোমান, মো. সোয়াব খান, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরফরাজ আহমেদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের আহবায়ক চৌধুরী ফয়ছল শোয়েব, উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী মাসুদ,

নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিঠু, সহসভাপতি মুরাদ আহমদ, সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম তালুকদার, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি নেতা মাওলানা শোয়েব আহমদ, দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায়, নবীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী সাহিদুল ইসলাম, উপজেলা শ্রমিকদলের সহসভাপতি আহাম্মদ ঠাকুর রানা, নবীগঞ্জ পৌর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এমদাদুল হক, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কালাম মিঠু, নবীগঞ্জ পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী,

আনন্দ নিকেতনের সভাপতি জাহাঙ্গীর বখত চৌধুরী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম আহমদ, সোহেল আহমদ, রুবেল মিয়া, আব্দুল মজিদ, আবু হুরায়রা মামুন, আব্দুস শাহিদ, পলাশ রতন দাশ, পৌর বিএনপি নেতা নিলকন্ঠ দাশ সামন্ত নন্টি, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সোহানুর রহমান চৌধুরী, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য ইকবাল হোসেন তালুকদার, সাগর আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক হাবিবুর রহমান হাবিব, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ইসলাম ইফতি প্রমুখ।

উক্ত মতবিনিময় সভায় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ছাত্র-যুব প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের উপদেষ্টা শফিকুল বারী আওয়াল বলেন, “হবিগঞ্জ সরকারি মেডিকেল কলেজ কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি হবিগঞ্জবাসীর স্বপ্ন। এই মেডিকেল কলেজ যদি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তবে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। জনগণের ঐক্যই আমাদের শক্তি।”

হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি পিষুয চক্রবর্তী বলেন, জনগণের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করি। হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হবিগঞ্জেই থাকবে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।” সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই মেডিকেল কলেজের জন্য আন্দোলন হয়েছে। অনুমোদনও হয়েছে।

এখন এর স্থায়ীত্ব নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। বক্তব্যে বক্তারা বলেন, “এই মেডিকেল কলেজ রক্ষা হবিগঞ্জের অস্তিত্ব রক্ষার অংশ। এটির বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় হবিগঞ্জবাসী ঐক্যবদ্ধ।” হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ রক্ষায় ভবিষ্যতে বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজ রক্ষায় নবীগঞ্জে সূধী সমাজের মতবিনিময়

ডেস্ক নিউজ ;;

প্রজাতপুর শব্দের অর্থ হলো—‘জনগণের নগর’। এই নাম শুনলেই মনে হয় এটি কোনো শহর, কিন্তু বাস্তবে এটি এক নিরিবিলি গ্রাম। ‘প্রজা’ মানে জনগণ, আর ‘পুর’ মানে নগর বা বসতি। অর্থাৎ, এই নামটি শুধু একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থান নয়, বরং একটি দর্শনের প্রতিফলন—যেখানে জনগণের সম্প্রীতি, প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সহাবস্থান, এবং সম্মিলিত জীবনধারার এক অনন্য ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে। সম্ভবত অতীতে এই গ্রাম ছিল একটি কেন্দ্রীয় স্থান, যেখানে আশেপাশের গ্রামের মানুষ একত্রিত হতো, যার কারণে একে বলা হতো “প্রজাতপুর”—জনগণের মিলনস্থল বা নগর।

হবিগঞ্জের এক কোণে, এক টুকরো গ্রাম—প্রজাতপুর। নাম শুনলেই যেন মনে হয় কোনো শহর। কিন্তু এ ‘নগর’ নয়, এটি এক আদিগন্ত  গ্রাম। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত এই গ্রামটি যেন প্রকৃতির কোলে জন্ম নেওয়া এক নিঃশব্দ কবিতা। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—নাম ‘প্রজাতপুর’ কেন? কী এমন ছিল এই গ্রামে যে একে বলা হলো “জনগণের নগর”?

শুধু একটি নাম নয়, এই নামের পেছনে লুকিয়ে আছে আত্মার বন্ধনে জড়ানো প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের ইতিহাস। পূর্বদিকে ছিল এক সময়কার প্রবল স্রোতের নদী নরখাই। এখন যদিও সে শুকিয়ে গেছে, একসময়ের জীবনধারার মূল ভরসা ছিল এই নদীই। বর্ষাকালে যখন গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে যেত, তখন নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। ছাত্র-ছাত্রীরা নৌকা করে যেত স্কুলে, কৃষকেরা আনত তাদের ফসল, পাশাপাশি সবাই যেত হাটবাজারে।

নরখাই শুধু যাতায়াত নয়, ছিল সাশ্রয়ের হাতিয়ারও। বাড়িঘর তৈরি করতে যখন দরকার হতো ইট-বালু-রড, তখন সেগুলো সহজেই নদীপথে চলে আসত ঘাটে। টাকা বাঁচত, সময়ও।

পশ্চিমে রয়েছে এক বিশাল হাওর। বর্ষায় এটি পরিণত হয় সাগরের মতো বিশাল জলের আধারে, আর হেমন্তে সেই জল সরে গিয়ে জেগে উঠে উর্বর জমি—শতশত বিঘার বিস্তৃতি। এই হাওরে শুধু প্রজাতপুর নয়, পাশের কয়েকটি গ্রামেরও জমি রয়েছে। ধান কাটা শেষে গরুর পাল নিয়ে রাখালদের যে উৎসবমুখর চিত্র দেখা যেত, আজ তা স্মৃতি হয়ে আছে শুধুই গল্পে।

এ গ্রামের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি গন্ধে মিশে আছে অতীতের নির্যাস। হাওরের পাড় ঘেঁষে যে মাটির পথ ধরে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে, তা যেন প্রকৃতির আঁকা ছবি। গ্রামের বয়স্করা আজও বলেন—“নরখাই নদী, হাওরের জল আর মাটির উর্বরতা—এই তিনে গড়া আমাদের জীবন।”

নতুন প্রজন্ম মোবাইলে ব্যস্ত, শহরের মোহে অভ্যস্ত। কিন্তু যখন তারা শোনে পুরনো দিনের কথা—নৌকাবাইচ, ধানের মৌসুম, রাখালের বাঁশি—তখন তারা বুঝে যায়, এই মাটিই তাদের শেকড়।

প্রজাতপুর—এটি শুধু একটি গ্রামের নাম নয়। এটি ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ, যেখানে হারিয়ে যাওয়া নদী, আজও দুলে ওঠা হাওর, আর হাজারো মানুষের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রচিত এক ভালবাসার গাঁথা। এই গ্রাম আমাদের শেখায়—নগর না হয়েও কীভাবে একটি গ্রাম হতে পারে ‘জনগণের নগর’।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাসে ভরপুর প্রজাতপুর গ্রাম

ফেসবুকে আমরা