রাকিল হোসেন॥ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে দুবৃর্ত্তদের হাতে বউ – শাশুড়ি নির্মমভাবে খুন হয়েছে। গত রোববার (১৩ মে) দিবাগত রাত ১১ টার দিকে উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ, পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা’সহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে তদন্তে নেমেছেন।
গভীর রাতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (৫০) ও তার পুত্রবধূ রুমি বেগম (২২)। নিহত রুমি ওই বাড়ির লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর স্ত্রী। এ ছাড়াও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, ডিবি, ডিএসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার পুত্র আখলাক মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে বসবাস করছেন। গত ২ বছর পূর্বে একই গ্রামের ডাঃ নজরুল ইসলামের ছোট বোন রুমি বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের কেছি গেইটে তালা লাগানো থাকতো। রোববার রাত ১১ টার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুরু হলে গ্রামের বিভিন্ন মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আখলাক মিয়ার বাড়ির উঠানে রক্তাত লাশ পরে আছে।
স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাহির থেকে গৃহবধূ রুমি বেগম ও ঘরের ভিতরে তার শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে লাশ দু‘টির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। খবর পেয়ে রাতেই হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম সামছুল ইসলাম, সার্কেল এসপি পারভেজ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহত রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তিনি তার বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজ খবর রাখতেন। গত রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় চোঁখে আঘাত পেয়েছে ঔষধ দেওয়ার জন্য। পরে বোনের পাশের বাড়ির কাজের লোক জনৈক তালেব মিয়া রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বোনের জন্য ঔষধ নিতে আসে। তার কাছে ঔষধ দিয়ে পাঠানোর দেড় ঘন্টার মাথায় নির্মম এ ঘটনার খবর পান।
এদিকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন স্থানীয় লোক জানান, চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দু‘টি দেখতে পান। এ সময় ঘরের একটি টেবিলে ৪ টি চায়ের কাপ ও ছিল। এতে ধারনা করা হচ্ছে হত্যাকারীরা ঘটনার পুর্বেই বাড়িতে অবস্থান করে চা চক্র করে। তবে ঘরের কোন মালামাল খোয়া যায়নি বলে নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন। এদিকে ডাকাতি করতে যেয়ে না অন্য কোন কারনে পরিকল্পিতভাবে বউ-শাশুড়ীকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ধারনা করা যাচ্ছে, হত্যাকারীরা পুর্ব পরিচিত। পুলিশ ঘরের ভিতরে পায়ের ১টি জুতা ও ১টি হাতঘরি উদ্ধার করেছে বলে জানাগেছে।
এদিকে পুলিশ গভীর রাতে কাজের ছেলে তালেব মিয়া এবং প্রতিবেশী ক্বারী আব্দুস ছালাম. তার ছেলে সাহিদুর রহমান এবং শুভ মিয়া’কে আটক করেছে। গতকাল সোমবারে সকালে ময়না তদন্তের জন্য লাশ দু’টি হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ.স.ম সামছুর রহমান জানান, ঘটনার পর পর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট মাঠে কাজ করছে। কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুব শ্রীঘ্রই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচার দাবী করছেন।
Leave a Reply