রেজাউল করিম সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জসহ জেলার ৬ আসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সিরাজগঞ্জসহ গোটা দেশের আার্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বিশাল এ নির্বাচনী জনসভায় আরো বলেছেন-আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। মানুষ শান্তিতে থাকে। বিএনপি জামাত জোটের শাসনামলে দেশে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, জঙ্গী উন্থান হয়েছে। দেশের সম্পদ লুটপাট হয়েছে। জনগণ আর হাওয়া ভবন দেখতে চায় না। আগুনে পুড়িয়ে যারা মানুষ হত্যা করে, তাদের কেউ ভোট দেবে না। তিনি সোমবার সিরাজগঞ্জের বাজার ষ্টেশন মুক্তির সোপানে জেলা আাওয়ামীলীগ আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন।
এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না যৌথভাবে সিরাজগঞ্জে নির্মানাধীন সরকারি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫ শ’ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল প্রকল্পের একাডেমিক ভবন ও দুটি হোস্টেল ভবনের কার্যক্রম উদ্বোধন করে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রী পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। উল্লেখ্য ২০২০ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও অধ্যাপক মিল্লাত এমপি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়িতে একটি ট্রমা হাসপাতাল নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ শহরে বিদ্যমান ২৫০ শয্যা বিশিস্ট সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নাম ”বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব” ২৫০ শয্যাবিশিস্ট জেনারেল হাসপাতাল নামকরণেরও ফলক উন্মোচন করেন। পরে সিরাজগঞ্জ পৌর সভা বাস্তবায়িত শহীদ এম মনসুর আলী সড়কেরউদ্বোধন এবং একটি ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জিএম সালেহ আহমেদ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহান সিদ্দীকা, পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী শামীম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক ডাঃ কৃষ্ণ কুমার পালসহ সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তাসহ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ তাঁর সাথে ছিলেন।
জনসভায় বিএনপিকে উদ্দেশে করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আপনারা গত নির্বাচনে আসেন নাই। ভুল করেছিলেন। এবার আর ভুল করবেন না। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো নির্বাচনে আসেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে বলে আশ্বস্ত করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বলেছেন, ইলেকশন ফেয়ার হবে, ভয়ের কোন কারণ নেই। বিশ্বাস করে আসেন। এখনো বলছি নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনে না বিএনপিকে আর বাটি চারান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সংলাপ প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামীলীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন- বঙ্গবন্ধু কন্যার উদার গনতান্ত্রিক মানসিকতায় তিনি সংরাপে বসেছেন। কিন্তু সংবিদানের বাইরে কোন দাবী মানা হবে না। সংবিধান অনুযায়ী ভারত আমেরিকার মতো গনতান্ত্রিক দেশে যেবাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধিনেই নির্বাচন হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত মুক্তির সোপানে অনুষ্ঠিত এ বিশাল নির্বাচনী জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, হাসিবুর রহমান স্বপন এমপি, ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন এমপি, তানভীর ইমাম এমপি, সেলিনা বেগম স্বপ্না এমপি,জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আবু ইউসুপ সুুর্য্য, কেএম হোসেন আলী হাসান, বিমল কুমার দাস, মোস্তফা কামাল খান, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা প্রমুখ।
নির্বাচন কমিশেেনর তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এ নির্বাচনী জনসভাস্থল নির্ধারিত সময় বিকেল তিনটার মধ্যে কানায় কানায় ভরে ওঠে। সিরাজগঞ্জ পৌর সভার প্রতিটি ওয়ার্ড, সদর এবং কামারখন্দ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ছাড়াও প্রতিটি উপজেলা থেকে মনোনযন প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের বাসে ট্রাকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জনসভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। ”জয় বাঙলা- জয়বঙ্গবন্ধু এবং নৌকা মার্কায় ভোট চাই” শ্লোগানে শ্লোগানে জনসভাস্থল প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতীয় নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং অধ্যাপক মিল্লাত এমপি’র নামেও শ্লোগান উচ্চারিত হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে স্মরাণাতীতকালের এই বৃহত্তম জনসভায় দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আরো বলেছেন-আওয়ামীলীগ দেশের উন্নয়ন করেছে। আর সেই অধিকার থেকে আবারও নৌকায় ভোট চাই। বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহবান জানিয়ে নাসিম বলেন, ২০১৪ সালের মত নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবেন না, নাশকতা-অরাজকতা করবেন না। খেলা হবে মাঠে-রেফারি থাকবে নির্বাচন কমিশন। খেলার মাঠে আসেন। আমরা জোরপূর্বক ভোট নেব না। আমেরিকার-ইউরোপের মত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে না আসলে বিএনপিকে বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন নাসিম। তিনি আরও বলেন, বিশ্বকাপের মাঠে মেসি নেইমাররা গোল মিস করতে পারে-কিন্তুশেখ হাসিনা গোল মিস করবেন না। জনগণের ভোট নিয়ে তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন। ড. কামালকে বেঈমান আখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি ও পরে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তিনি আজ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের সাথে ঐক্য করেছেন। জনগন ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দলের শীর্ষ এই নেতা বলেন, খালি জয় বাংলা বললে হবে না। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে-উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে হবে। মনোনয়ন যে কেউ চেতে পারেন-কিন্তু শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেন না কেন তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
Leave a Reply