করোনার ঝুঁকি থাকার পরও দলে দলে ধান কাটতে নেমেছেন কৃষক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::

হাওরে হাওরে সোনা রঙ ধরেছে ধানে। কৃষকের মনে ধরছে না আনন্দ। কিন্তু অকাল বন্যা ও করোনার ঝুঁকি থাকার পরও দলে দলে ধান কাটতে নেমেছেন কৃষক। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিনা পারিশ্রমিকে ধান কাটায় সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। এবং অসংখ্য শ্রমিক বাহির জেলা থেকে এসে ধান কাটায় যোগ দিয়েছেন। এদিকে জেলা প্রশাসন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অকাল বন্যার পূর্ভাবাস থাকায় দ্রুত ধান কেটে ফেলার জন্য সর্বত্র মাইকিং করে শ্রমিকদের উৎসাহিত করছেন। তাদের প্রেরণায় শ্রমিকরা উৎসাহিত হয়ে হাওরে ধান কেটে মাড়াই শুরু করেছেন। শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের কৃষক মাহবুবুর রহমানের সাথে কথা হয়, তিনি জানান আমি ১০০ কেদার বোরো জমি চাষ করেছি। আজ থেকে ধান কাটার মেশিন দিয়ে কাটা শুরু করেছি। এছাড়া এলাকায় টাঙ্গাইল থেকে শ্রমিক এসেছেন। এবং ঢাকা থেকে গার্মেন্সকর্মীরা এসে ধান কাটায় নেমেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫/৬ দিনের ভিতরে ফসল কাটা শেষ করতে পারব। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের মাঝে করোনার ভয় নেই। তবে বজ্রপাত ও অকাল বন্যার আতংক রয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলার কৃষক নেতা খায়রুল বশর ঠাকুর খান জানান, আমাদের পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার বাড়ছে। করোনার এ উত্তাপ এসে লাগছে ধর্মপাশায়। ফলে অনেক শ্রমিক আসতে চাইলেও লকডাউন থাকায় আসতে পারছে না। এ ছাড়া জমির মালিকরাও নেত্রকোনা থেকে শ্রমিক আনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা নিজেরাই নিজেদের ধান কাটতে হাওরে নেমেছেন। এবং এলাকার শ্রমিকরা কায়দা করে ধান কাটার মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানকার হাওরে শ্রমিক সংকট থেকেই যাবে বলে তিনি জানান। তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক আকমল আলী জানান, করোনায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ায় আয় রোজগার নেই এলাকার মানুষের। সামনের দিনগুলো খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিতে পারে। তাই আমরা করোনাকে উপেক্ষা করে হাওরে ধান কাটা শুরু করেছি। বাহির জেলা থেকেও শ্রমিক এসে ধান কেটে দিচ্ছেন। এছাড়া সরকার যে ধান কাটার মেশিন দিয়েছে তা দিয়ে দিনে কমপক্ষে ৩০ কেদার জমির ধান কাটা যায়। এ হিসেবে শ্রমিক তেমনটি নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের এবার বাম্পার ফলন ঘরে উঠবে। কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলার হাওরে এবার বোরো চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টন। সিলেট আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অন্যান্য বছর কমপক্ষে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, এখনো পর্যন্ত এই পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। শুস্ক আবহাওয়া বিরাজমান। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সফর উদ্দিন জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২২০ মিলিটার বৃষ্টিপাত হবার সম্ভবনা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এসেছেন। এবং শ্রমিক সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ধান কাটার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব মেশিন দিয়ে দ্রুত ধান কেটে তুলতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা