শাহ এসএম ফরিদ, জগন্নাথপুর থেকে::সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের ফসলের মাঠে যেন এখন সবুজের বিছানা। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সর্বদিকে এ যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। দিন যতো বাড়ছে ততোই সবুজ রোপার মধ্য দিয়ে ধানের শীষ বের হচ্ছে। কৃষকের হৃদয়ে সঞ্চারিত হচ্ছে ভিন্ন এক আমেজ।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশ্বিন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোপা-আমন রোপনের কাজ শেষ হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে কাটা শুরু হয়ে শেষ হবে পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। বলা হয়, কৃষি দেশের অর্থনীতির প্রধান কর্মকান্ড এবং জীবনীশক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয়বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি সামাজিক কর্মকান্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র যা জনগনের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে সংশ্রিষ্ট। একারণে কৃষি উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারিভাবে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। যার ফলে গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবার কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হচ্ছে।
জগন্নাথপুর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪শত হেক্টর। আবহাওয়া পক্ষে থাকায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওর ও কুশিয়ারা নদীর কুল ঘেঁষে শত শত হেক্টর জমির বুকে রোপন করা রোপা-আমন বাতাসে দোল খাচ্ছে। চারদিকে তাকালে শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মধ্যে দু’একটি ধানের শীষও বের হয়েছে।
উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের কৃষক হাজী এখলাছুর রহমান জানান, তিনি ৪ কেয়ার (বিঘা) জমিতে ধানের চারা রোপন করছেন। পোকা-মাকড় কিংবা আগাছা জনিত কারণে যাতে ফলন নষ্ট না হয় সেকারণে তিনি জমি পরিচর্চায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জমিতে সময় মতো ধান রোপন করতে পেরেছেন বলে ধান গাছ দ্রুত বেড়ে উঠছে। মাঠে এসে জমির দিকে থাকালে তার মন খুশিতে মেতে ওঠে। কুশিয়ারা নদী র্তীরবতি অনেক কৃষক জানান, বন্যার জন্য কয়েকবার বিজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এবার বাম্পার ফলন আসা করছি। তারা জানান, জমিতে ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহে ধান রোপন করা শেষ হয়েছে। অগ্রহায়ন মাসের শেষ সপ্তাহে ধান কাটবেন বলে আশায় রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান মজুমদার জানান, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে সময় উপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছে। আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদনে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ যথারীতি মাঠ দিবস পালন করা হচ্ছে। কৃষকরাও তাদের গ্রহণ করা প্রশিক্ষণ ফসলের মাঠে কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন এবার ব্রি ধান ৪৮, মৌসমে ৪৯ ও জলাবদ্ধতা সহনশিল ৫১-৫২ ব্যাপক আবাদ করা হয়েছে। কুশিয়ারা র্তীরবতি কৃষকদের ভাসমান বিজতলা তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। ব্রি ধান ২২-২৩ আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের পোকা মাকড় মুক্ত রাখতে ও যতাসময়ে সেচ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বীজ রোপন করারপর কৃষকরা এখন আর ঘরে বসে নেই। প্রতিদিন জমির আইলে ঘুরপাক খাচ্ছেন। কোনো ধরেণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মূখীন না হলে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply