নবীগঞ্জের আউশকান্দিতে মাতৃভাষা দিবসের র‍্যালী ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ

বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:– মহান ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নবীগঞ্জের আউশকান্দিতে সকল ভাষা শহীদের স্বরণে আউশকান্দি রশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, উদয়ন বিদ্যাপিঠ, দি লিটল ফ্লাওয়ার জুনিয়র হাই স্কুলের পক্ষ থেকে সকল ভাষা শহীদের স্বরণে র‍্যালী শেষে আউশকান্দি স্কুল ও কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। এ সময় অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, শিক্ষিকা, অভিভাবক, সাংবাদিক, ডাক্তার সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এরপর মিঠাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মায়াবী সংগীতালয় একাডেমী, মর্ডান মিউজিক মিডিয়া, কাবির ডেকোরেট্রার্স ও ওসমানী স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে সকল ভাষা শহীদের স্বরণে র‍্যালী শেষে পুষ্পস্তবক অর্পন করে মিঠাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শহীদ মিনারে। এ সময় শিক্ষক, শিক্ষিকা, অভিভাবক, সাংবাদিক, ডাক্তার সহ সুশিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, সভ্যতার শুরুর দিন থেকেই মানুষ নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। কখনো অঙ্গভঙ্গি, কখনো গুহা বা দেওয়াল চিত্র, কখনো মুখের বিভিন্ন শব্দ হয়ে উঠেছে ভাব প্রকাশের মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের এই বিক্ষিপ্ত শব্দই পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে ভাষায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অঞ্চলভেদে ভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে, দীর্ঘসময় ধরে সহস্রেরও অধিক ভাষা ও ভাষাগোষ্ঠী গড়ে উঠে। কোনো একটি ভাষাগোষ্ঠীর সন্তানেরা তাদের জন্ম থেকে একটি নির্দিষ্ট ভাষায় ভাব প্রকাশ করতে শেখে। এই নির্দিষ্ট ভাষাটি হলো তাদের মাতৃভাষা। বঙ্গীয় সমাজে আমাদের বাংলা ভাষার অবস্থান এবং গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝানোর জন্য ভাষা চেতনার জাগরণ হয়। এই সূত্র ধরে বাংলাদেশে বা পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় (বিভাগের পূর্বে) ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ভাষার জন্য বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে এই বিষয়টি নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলনের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ আন্দোলনের জন্য বাংলাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করেন। তাদের দাবি ছিল, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ পুলিশের গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জাব্বার নামক ছাত্ররা নিহত হন। এছাড়াও অনেক ছাত্র আহতও হন। এই নৃশংস ঘটনা সাধারণ জনগণের মনে প্রভাব সৃষ্টি করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনে জনগণ এই নিন্দনীয় ঘটনার প্রতিবাদে সমবেত হন। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি জনগণ একইভাবে হোস্টেলের সামনে সমবেত হন। শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে ২৩শে ফেব্রুয়ারি জনগণ তাদের স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলে। এই আন্দোলন দমন করার জন্য ২৬শে ফেব্রুয়ারী সরকার স্তম্ভটিকে ভেঙ্গে দেয়। সরকারের এই আচরণের ফলে ভাষা আন্দোলন আরও দ্রুতগতি লাভ করে। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। এই সালের ৭ই মে একটি অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি পায়। ১৯৫৬ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৭ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে “বাংলা ভাষা প্রচলন বিল” পাশ হয়। এই বিল কার্যকর হয়। ১৯৮৭ সালের ৮ই মার্চে, আজকের এই বিশেষ দিনকে স্মরণ করে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে র‍্যালী ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা