রাকিল হোসেন:: নবীগঞ্জের বাংলাদেশী বংশদুত বৃটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিন(৩৫) নামের এক যুবককে মৌলভীবাজারে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কস্থ উদ্দিপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। নিহত জালালের শরিরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার তফতিবাগ গ্রামের মৃত মোঃ গিয়াস উদ্দিনের পুত্র জালাল উদ্দিন প্রায় ৭ মাস পূর্বে দেশে আসেন। মাদকাসক্ত থাকায় তাকে মৌলভীবাজার উদ্দিপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ২ সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ডিসেম্বর বাড়ি নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে আবার ২৯ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয় ওই নিরাময় কেন্দ্রে।
নিহতের ভাই শওকত মিয়া জানান গত রোববার সন্ধ্য মুঠোফোনে মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে তাকে জানানো হয় জালাল অসুস্থ হয়ে পরেছে তাকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। এ খবরে তারা দ্রুত সিলেট যান এবং হাসপাতালে খুজাখুজি করে জালালকে পাননি। পরে মৌলভীবাজার এসে উদ্দিপন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সামনে একটি এম্ব্যেুলেন্সের ভেতর তার মৃত দেহ দেখতে পান। এ সময় নিরাময় কেন্দ্রের কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। নিহত জালালের শরিরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে বলে তিনি জানান।
উদ্দিপন মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে পালিয়ে আসা রিপন নামের একজন জানান ,আমি জালালের সাথে থাকতাম। প্রতিদিনই তারা জালালকে মারধর করতো। শুধু জালাল না আমাদের সবাইকে তারা বেত ও লোহার রড দিয়ে পিঠাতো।সে জানায়. শনিবার দুপুরে জালাল তার মাকে এক নজর দেখবে বলে চিৎকার করলে ওই কেন্দ্রের পরিচালক সহ কয়েকজন রুমে প্রবেশ করে। তার সামনেই প্রথমে তারা জালালের পরনের কাপড় খুলে হাত পা ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে বেত দিয়ে পেঠায়। এক পর্যায়ে তারা তার বুকের উপর উঠে মারপিঠ করে। এর ২০মিনিট পর জালাল মারা যায়।
রিপন আরো জানায় চিকিৎসা নিতে আসা ২৫ জনের মধ্যে ২২ জন রাতে দরজা ভেঙ্গে ভবনের ছাদে উঠে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে ৩ জন মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তারা বেরিয়ে যেতে পারে নাই।
নিহত জালালের মামা মোঃ এমদাদুল হক জানান, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সবাই আমার ভাগ্নাকে হাত পা বেঁধে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ স্বাস্তির দাবী করেন।
নিহত জালাল ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। রাব্বি নামের ৫ বছর বয়সী তার এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী ও সন্তন দেশে থাকতেন। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা জানিয়েছেন তারা এই হত্যার ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালেরে মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
মৌলভীবাজার মডেল থানার এস আই তাপস জানান খবর পেয়ে লাশ উদ্ধর করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ঘটনা কি প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
উদ্দীপন মাদক নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সবাই ঘটনার পর থেকে তারা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পলাতক রয়েছেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৪টার সময় নিহত জালালের লাশবাহী এম্বুলেন্স নিজ বাড়ী তপথিবাগ গ্রামে এসে পৌছলে মা ভাই বোন স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে শুরু হয় কান্নার মাতম। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাদমাগরিব স্থানীয় কলেজ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
Leave a Reply