বিবিয়ানায় তীব্র গ্যাস সংকট : মেরতামতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা।। ছয়টি কূপের মধ্যে একটি চালু হয়েছে

নবীগঞ্জ ( হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের বিকল হয়ে যাওয়া দুটি প্রসেস ট্রেন ও ৬টি কূপের মধ্যে ১টি প্রেসেস ট্রেন এবং ১টি কূপ চালু হওয়া কথা জানিয়েছে শেভরন।
শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান জানান- শেভরন বাংলাদেশ বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টকে পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে, প্লান্টে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি প্রসেস ট্রেনের মধ্যে একটি প্রসেস ট্রেন উৎপাদন ও একটি কূপ সোমবার পুনরায় চালু হচ্ছে। তিনি বলেন-  ট্রেন এবং সমস্ত অবশিষ্ট কূপগুলির কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হয়েছে। পুরোপুরি ঠিক হতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন- হঠাৎ করে কী কারণে ট্রেন ও কূপে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
গত রোববার (৩ এপ্রিল) সকালের দিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের হঠাৎ প্রায় ৪৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাসের সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দেয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এই সমস্যা আরও কয়েকদিন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। কূপ থেকে তোলার পর প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পাইপলাইনে বিশুদ্ধ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর গ্যাসের সঙ্গে আসা নানা উপজাত আলাদা করে ফেলা হয়।
পেট্রোবাংলা ও শেভরন সূত্র বলছে, রবিবার সকালে হঠাৎ নবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আসে। কোন কূপ থেকে উঠছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। তাই জরুরি ভিত্তিতে দুটি প্রসেস ট্রেন ও ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিবিয়ানা বর্তমানে সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র। হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকে। ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে থাকেন। ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরী রান্না করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সূত্রে জানা গেছে, দেশে দিনে ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও শনিবার মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭৯ কোটি ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে বিবিয়ানা থেকে সরবরাহ করা হয় ১১৫ কোটি ঘনফুট। রোববার দুপুরের পর থেকে বিবিয়ানায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যায়। এতে বাসার চুলায়, শিল্পকারখানায় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ কমতে থাকে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
এমন পরিস্থিতিতে দুঃখপ্রকাশ করে রোববার দুই দফা বিবৃতি দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রথম দফায় বলা হয়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় দফা বিবৃতিতে বলা হয়, গ্যাস সরবরাহ ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
রোববার সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা