নোয়াখালী থেকে নবীন::একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারনা, গণসংযোগ ও জনসভা। দলীয় সভানেত্রী ও চেয়ারপার্সনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির দূর্গ এখন আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনে, অপরদিকে মামলায় জর্জরিত বিএনপি। বিগত সময়ে নোয়াখালী-৪ বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল, এখন দলীয় কোন্দল, সরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতা না আসায় তূনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা, মামলা হামলার ভয়ে কার্যক্রম অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ায় কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে নোয়াখালী এখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তার আস্থাভাজন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির বলিষ্ট নেতৃত্বে বিএনপির দূর্গ এখন আওয়মীলীগের দূর্গ হিসাবে স্থান পেয়েছে। নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের কান্ডারী একরামুল করিম চৌধুরীর বলিষ্ট নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে বলে নেতা কর্মীরা জানান।
দলীয় সভানেত্রী ও চেয়ারপার্সনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আওয়ামীলীগ থেকে একক প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী ও বিএনপির সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির আরেক তরুন প্রার্থী ব্যারিষ্টার আবু সালেহ মো: সায়েম প্রার্থী হতে পারেন।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হোসেন আজাদ, জেলা সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু, জাতীয় পার্টির নেতা অহিদ উদ্দিন মূকুল, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আলহাজ¦ মো: আব্দুল হান্নান মননোয়ন প্রত্যাসী।
নোয়াখালী-৪ আসনে ২০০৪ সালের ২৩ জুলাই ভোটের মাধ্যমে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন তরুন উদিয়মান একরামুল করিম চৌধুরী। জেলা আ’লীগের দায়িত্ব নেবার পর থেকে প্রতিটি এলাকায় ও উপকূলীয় দূর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে তূনমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারন মানুষের কাছে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। একই সংগে দলের বিরোধ মিটিয়ে দলকে পূনগঠনের কাজ শুরু করেন। এতে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা চাঙ্গা হয়। জননেতা মরহুম আবদুল মালেক উকিলের মৃত্যূর পর দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নোয়াখালী হয়ে উঠে বিএনপির ঘাঁটি। সে ঘাঁটিতে একরামুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে আজ আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসাবে পরিনত হয়েছে। নেতা কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার নেতৃত্বে কাজ করায় এখানে কোন ধরনের গ্রুপিং এর সৃষ্টি হতে পারেনি। যার ফলশ্রƒতিতে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীতে মালেক উকিলের হারানো আসন দীর্ঘ ২৪ বছর পর একরামুল করিম চৌধুরী পুনুরদ্ধার করে চমক সৃষ্টি করেন।
বিগত ৫ জানুয়ারী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যখন তান্ডব তখনও তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এ আন্দোলন সংগ্রামে রাস্তায় থেকে নেতৃত্ব দেন। ঐ সময়ে অনেক সংসদ সদস্যকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও একরামুল করিম চৌধুরী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে প্রতিদিন মাঠে ময়দানে থাকতেন। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর নুতন উদ্যোমে আবার কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তাকে পুনরায় সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে তিনি তার অধিনস্ত সকল উপজেলাগুলোকে চাঙ্গা করার কাজে হাত নেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আলহাজ্ব সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, প্রার্থী হিসেবে দলে একরামুল করিম চৌধুরীর বিকল্প আর কেউ নেই। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট ওমর ফারুক জানান, একরামুল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে নোয়াখালীতে আওয়ামীলীগ খুবই ঐক্যবদ্য ও শক্তিশালী। তিনি অরো বলেন বিগত ৯ বছরে নোয়াখালী জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে ৪০ বছরে তা হয়নি। এটি মুলত সম্ভব হয়েছে বর্তমান সাধারন সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর বলিষ্ট নেতৃত্বের কারনে।
অপরদিকে বিএনপির দূর্গ হিসাবে পরিচিত নোয়াখালী জেলায় তাদের কার্যক্রম প্রায় সীমিত । বিগত ৯ বছরে ক্ষমতার বাহিরে থাকায় এবং মামলা হামলার ভয়ে অন্দোলন সংগ্রামে তাদের কর্মী সমর্থকদের সরব উপস্থিতি না থাকায় তাদের এখন আর অবস্থান নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইচ চেয়ারম্যান ও জেলার সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান সকল নেতাকর্মীদের নিকট জনপ্রিয় আস্থাভাজন হলেও তিনি প্রায় সময় কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বপালন করায় জেলায় এখন আর আগের মত সময় দিতে পারেন না। ফলে জেলায় তাদের আধিপত্যসহ পূর্বের অবস্থা নেই বল্লেই চলে। বর্তমানে জেলার নূতন সভাপতি এজেডএম গোলাম হায়দার বিএসসি ও সাধারন সম্পাদক জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি আ্যডভোকেট আবদুর রহমান সহ দুজনে আন্তরিক হলেও আগামীতে তারা দলের হাল ধরে কতটুকু আগলাতে পারবেন এবং আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের হারানো আসন পূনউদ্ধার করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও নেতা কর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা মোকাদ্দমায় জর্জরিত, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার অবস্থান নেই, তবুও সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশ গ্রহন মূলক নির্বাচন হলে জেলার সব কটি আসনে বিএনপি জয়লাভ করবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোয়নয়ন পেতে ইতিমধ্যে অনেকেই এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীর সাথে জনসংযোগ শুরু করছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের পাশাপাশি বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের এলাকায় আনাগোনা রয়েছে।
বিএনপিও তাদের পুরানো শক্তি ফিরে পেতে নুতন কমিটি নিয়ে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকার পাশপাশি হাইকমান্ডের দ্বারস্থ হচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নোয়াখালী – ৪ (সদর- সুবর্নচর) আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী যিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইচ চেয়ারম্যান এ আসনের বিগত ৩ বারের সংসদ সদস্য মোঃ শাহজাহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে থেকে এ আসনে তিনি তার অবস্থা শক্তিশালী করায় এ আসনে তিনিই আওয়ামীলীগের একমাত্র দলীয় প্রার্থী। তিনি প্রতিনিয়ত গনসংযোগ, সভাসমাবেশ করে নিজের এবং দলের অবস্থা অটুট করে রাখায় এখানে আর কোন বিকল্প প্রার্থী নেই। অপরদিকে বিএনপি থেকে প্রার্থী হবেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় ভাইচ চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির আরেক তরুন প্রার্থী ব্যারিষ্টার আবু সালেহ মো: সায়েমও প্রার্থী হতে পারেন। অপর দিকে জাসদ থেকে সাংবাদিক ফিরোজ আলম ও এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
Leave a Reply