সুনামগঞ্জে ফুসে উঠছে সুরমা,পানিবন্দী গ্রামের পর গ্রাম

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::টানা তিনদিনের বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। থমকে গেছে জনজীবন । বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হওয়ার কারেণ বন্ধ রয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘন্টায় (গতকাল সকাল ৬ টা থেকে বুধবার সকাল ৬ টা) সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া, সাহেববাড়ি ঘাট, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, খালিপুরসহ বেশ কিছু এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া জেলার দোয়ারাবাজার , বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা, তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, ধনু, যাদুকাটা, রক্তি, চলতি, বৌলাইইসহ প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বেড়েই চলেছে দুর্ভোগ। জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসিম জানান, আমার ইউনিয়নের ৩৯ টি গ্রামে পানিবন্দী হওয়ায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে।

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিত জানান, ইউনিয়নের ৮/১০ টি গ্র্যামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান বাড়বে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ৪৮টি গ্রামই পানিবন্দী। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়ার রাস্তা পানির নিচে। প্রায় দুই শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া জেলার একাধিক চেয়ারম্যান জানান, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় অসংখ্য গ্রামের মানুষ পানি বন্দী রয়েছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম আল ইমরান জানান, জামালগঞ্জের বেহেলী, ফেনারবাক, জামালগঞ্জ উত্তর ও সদর ইউপি’র নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটি’র সভায় পুর্নাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমীর বিশ্বাস জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। পানি আরো বাড়লে ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হয়েছে। তবে এখনো কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। জন দুর্ভোগ বাড়ছে। সভা আহবান করা হয়েছে। পরে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান জানাতে পারব।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কান্তি চক্রবর্তী জানান, ধর্মপাশায় এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। যেহেতু হাওরাঞ্চল এলাকা কিছু মানুষ পানিবন্দী আছে। এখনো কোন ক্ষয় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম বিল্লাহ জানান, হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত শাল্লা প্রচুর বৃস্টিপাত হচ্ছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনো কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভুইয়া জানান, সুরমার নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত বছরের তুলনায় এখনো ডেঞ্জার লেভেল কম আছে। জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাইনি। তবে আগাম বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় ১০ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা দেয়া আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা