হবিগঞ্জ-১ আসন।। দুই এমপি বিদ্রোহী প্রার্থী ॥ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

এম,এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) থেকে॥আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে মহাজোটের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মহাজোটের বর্তমান দুই এমপি বিদ্রোহ করেছেন। তারা দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও মহাজোট থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতা নির্বাচিত জাপার এমপি এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। অপর দিকে মহাজোটের পক্ষে আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র গাজী শাহনেওয়াজ মিলাদ ও জাপার পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির পাল্লামেন্টারী বোর্ডের সদস্য আতিকুর রহমান আতিক দলীয় মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

এদিকে ঐক্যফ্রন্ট পক্ষে গনফোরাম থেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএসকিবরিয়ার পুত্র ড.রেজা কিবরিয়া ও সাবেক সংসদ সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শেখ সুজাত মিয়া মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। দুইজোটের ৪ প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করার সবার মধ্যে আলোচনা কে হচ্ছেন মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের মুল প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন বংলাদেশ থেকে মাওলানা আবু হানিফ আহমদ হোসেন,স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লন্ডন প্রবাসী সমাজ সবক আব্দুল হান্নান মনোনয়ন দাখিল করেন। হবিগঞ্জ-১ আসনে মোট ৮জন প্রার্থীর মধ্যে ৬ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট ও ২ জন রিটার্নিং অফিসার ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক এর নিকট মনোনয়ন দাখিল করেন।

সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে- মহাজোটের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ফরিদ গাজীর তনয় আওয়ামীলীগ নেতা শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেত্রী এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন গনফোরামের প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও বিএনপির প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া।

এদিকে এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী গত সোমবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে চুড়ান্ত প্রার্থী হিসাবে চিঠি পেয়েছেন। অপর দিকে, জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক।

মিলাদ গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। আর বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মুনিম চৌধুরী বাবুকে বাদ দিয়ে আতিকুর রহমান আতিককে জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় নবীগঞ্জ শহরে ঝাড়– মিছিল করেছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে শেষ মুহূর্তে কে হচ্ছেন মহাজোটের একক প্রার্থী এনিয়ে নেতাকর্মীদের নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট থেকে হবিগঞ্জ জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি আসনে জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিককে ছেড়ে দেওয়া হবে। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মিলাদ গাজী আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের স্বার্থে এ আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। সে সময় দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে মিলাদ গাজী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন জাপা নেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। এবার আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে রাখতে মনোনয়ন বোর্ডের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ-ঘাটে চষে বেড়িয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিংয়ে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মিলাদ গাজীকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন কেয়া চৌধুরী। মনোনয়ন বঞ্চিত কেয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন।

অপর দিকে, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে গণফোরামে যুক্ত হয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। ইতিমধ্যে তিনি সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আনুষ্টানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীতা ঘোষনা করেছেন। এখন তিনি ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষনার অপেক্ষায় রয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে রেজা কিবরিয়াকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ এ আসনের দীর্ঘদিন ধরে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছিলেন শেখ সুজাত মিয়া। এমনকি তিনি বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই।

এব্যাপারে জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী এম,এ মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি বলেন, আমি দলের মহাসচিবের মনোনয়ন বানিজ্যের শিকার হয়েছি। ৫ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি তাই জনতার চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করেছি। জাপার দলীয় প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, জাপার চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের প্রতি অনুগত্য না দেখিয়ে বিদ্রোহ যে বা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে তাদের আজীবনের জন্য বহিস্কার হবেন। দলীয় মনোনয়ন জরিপের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল প্রসঙ্গে বলেন দলের হাই কমান্ড মহাজোট যে সিন্ধান্ত নিবেন সেটাই মেনে নিবো।

আমি হবিগঞ্জ-১ আসন ছাড়া দলের পক্ষে হবিগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছি। আশাকরি একটি আসন পাবো। মহাজোটের পক্ষে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র গাজী শাহনেওয়াজ মিলাদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো মনোনয়ন দিয়েছেন। গত ২০১৪ সালে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমি নেত্রী নির্দেশে আমি প্রত্যাহার করি। এবারও জননেত্রী যে সিন্ধান্ত নিবেন আমি মাথা পেতে নিবো। তবে আমি আশাবাদী এবার নৌকা বঞ্চিত হবে না।

আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ঐক্যফ্রন্টে কমান্ড যে সিন্ধান্ত নিবেন আমি সেটা মেনে নিবো। আমি শতভাগ আশাবাদী আমার বাপ দাদার জন্মস্থান নবীগঞ্জ বাহুবলে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে জনগনের সেবা করতে সুযোগ পাবো।

বিএনপির প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া বলেন, আমি বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের একমাত্র প্রার্থী। আমাদের হবিগঞ্জ-১ আসনে ঐক্যফ্রন্টে আর কোন প্রার্থী আছে বলে আমার জানা নেই। হাই কমান্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে তাই খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন দাখিল করেছি। ড.রেজা কিবরিয়া প্রসঙ্গে বলেন আমি জানিনা সে কোন দলের প্রার্থী। রেজা ধানের শীষ পেলে তার অবস্থান কি হবে জানতে চাইলে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সেটা এখন বলবো না সময়েই দেখা যাবে কি হয়।

আমি ৩০ বছর ধরে দলের কাজ করেছি আমি ছাড়া আর কেউ এখানে নির্বাচন করতে পারবে না। আমিই দলের বৈধ প্রার্থী এটা জেলে থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশ । আমি তারেক রহমানের সাথে লন্ডনে কথা বলে এসেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা