জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::ঢাকা নারায়ণগঞ্জের সুনারগাঁ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল হানিফের ছেলে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে,ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট,জাল ভোটার আইডি কার্ডে ছব্দ নাম ও বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতারনার অভিযোগ করা হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের শ্যামারগাঁও গ্রামের মৃত মানিক মিয়া’র মেয়ে হেলনা আক্তার তার প্রতারক স্বামী ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর বিরুদ্ধে গত ২৫ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর উপরুক্ত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে হেলেনা আক্তার উল্লেখ করেন,হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীরগঞ্জ বাজারে কলি ফার্মেসিতে চিকিৎসা চেম্বারে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর সাথে ২০১৩ সালে পারিবারিক ভাবে আলোচনা সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী কাবিননামা সম্পাদন করে বিয়ে হয়।বর্তমানে তাসফিয়া নামে তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।ডাক্তার মহসিন তারেক গাজী প্রথমে ২০০৮ সালে রাজশাহীর চাপাই নবাবগঞ্জের খন্ডলপাড়া গ্রামের শামসুন্নাহার নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন।এই বিয়ে গোপন করে হেলনা আক্তারকে বিয়ে করেন।
পরে বিয়ের বিষয়টি জানাযানি হলে ডাক্তার মহসিন তারেক প্রথম বিয়ের কথা স্বীকার করেন এবং স্ত্রী কর্তৃক একটি তালাকনামা দেখান।উক্ত তালাকনায় প্রথম স্ত্রী শামসুননাহার উল্লেখ করেন,বিয়ের চার বছর সংসার করে তার স্বামীর কাছ থেকে অন্যায় অত্যাচার,নিপীড়ন নির্যাতনের ছাড়া সে কিছুই পায়নি।শেষপর্যন্ত নির্যাতন নিপীড়ন ও বরনপোষন না নেয়ার কারনে ২০১২ সালে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীকে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার তালাক প্রদান করেন।হেলনা আক্তার অভিযোগে বলেন,হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করলে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট প্রামানিত হয়।জালিয়াতি করে সার্টিফিকেট তৈরি করে সাধারণ রোগীর সাথে প্রতারণার অভিযোগে ২০১৪ সালের ২১ মে ভ্রাম্যমান আদালত তার স্বামীকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।ভুয়া ডাক্তার প্রমানিত হওয়ার বিষয়টি গোটা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পরই রাতের আঁধারে গোপনে কাউকে না জানিয়ে স্ত্রী সন্তানকে রেখে পালিয়ে যায়।
স্বামীহারা স্ত্রী তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে হন্যে হয়ে খোঁজে সিলেটস্থ দানবীর রাগীব আলীর মালিকানাধীন মালনীড়চরা চা-বাগান হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তার সন্ধান পাওয়া যায়।সেখানে গিয়ে স্ত্রী হেলনা আক্তার স্বামীর অধিকার ও সন্তানের বরণপোষন চাইলে প্রতার ডাক্তার তার মেয়ে সহ তাড়িয়ে দেয়।মালনিড়চরা চা-বাগান হাসপাতালে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজী সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রামের বজলু মিয়ার মেয়ে সাবিনা বেগমকে তৃতীয় বিয়ে করেন।বর্তমানে ডাক্তার মহসিন তারেকের ঔরসে তৃতীয় স্ত্রী সাবিনার সংসারে হাবিব নামে দেড় বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে বলেও হেলনা আক্তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।এদিকে কিছুদিন পরই চা-বাগান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ডাক্তারে অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তার এমবিবিএস সার্টিফিকেট সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করলে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর এমবিবিএস সার্টিফিকেট জাল ভুয়া প্রমানিত হয়।
এঘটনায় ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর বিরুদ্ধে “রাগীব আলীর চা-বাগানে ভুয়া ডাক্তার শিরোনামে ” ১৬ সালের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।মালনীড়চরা চা-বাগান হাসপাতালে ভুয়া সার্টিফিকেট প্রামানিত হওয়ার পরই সেখান থেকে স্ত্রী সাবিনা ও পুত্র হাবিবকে ফেলে রেখে এই ভুয়া ডাক্তার সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আলীগঞ্জ বাজারে নিজস্ব চেম্বার করে চিকিৎসা সেবায় বহাল তবিয়তে কর্মরত রয়েছেন।আলীগঞ্জ বাজারে চেম্বার করার পরই প্রতারক ডাক্তার মহসিন তারেক গাজী চতুর্থ বারের মত ছাতক উপজেলার সঞ্জবপুর গ্রামের শরিফা খানম নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে সংসার করে আসছেন।
এব্যাপারে হেলেন আক্তার এ প্রতিনিধিকে বলেন,ডাক্তার মহসিন তারেক গাজী তার পরিবারের সরলতার সুযোগে বিয়ে করে এবং তার অনুমতি ছাড়া সে আরও দু’টি বিয়ে করেছে। স্ত্রীর মর্যাদা সহ অধিকার চাইলে তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান সহ বারবার তাড়িয়ে দিচ্ছে।সে বরনপোষনের কোনপ্রকার দায়দায়ীত্ত না নেয়ার কারনে হেলনা আক্তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।অভাবের কারনে সে তার প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেনা।ডাক্তার মহসিন তারেক তারেক গাজীর নানা অপকর্ম ও প্রতারণার সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, প্রতারক এই ডাক্তার ভুয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে শুধু প্রতারণা করছেনা সে একাধিক জাল ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করছে।
একটি ভোটার আইডিতে তার ঠিকানা আদর্শ আবাসিক এলাকা,খোজারখলা সিলেট।অন্যটি বড়নগদীপুর, দিরাই সুনামগঞ্জ। এছাড়াও আরো গোপন বিয়ে সহ জাল ভোটার আইডি থাকতে পারে এমন সন্দেহ রয়েছে। উপরুক্ত ব্যাপারে ডাক্তার মহসিন তারেক গাজীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সহায় পরিবারের মেয়েদের বিয়ে করে জীবন নষ্টকারী প্রতারক এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভুক্তভোগী হেলনা আক্তার পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।##
Leave a Reply