হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জে ইরি-বোরো ধান কাটার শুরুতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আর শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকদের হাওরে পাকা জমিনে ধান কাটতে পারছেন না। যার ফলে পাকা ধান জমিতে রেখে কৃষকরা শ্রমিকদের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাচ্ছেন। বিশেষ করে জেলার ভাটি এলাকা বলে খ্যাত বানিয়াচঙ্গ-আজমিরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার নিচু এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তবে কিছু কিছু এলাকার হাওরে কৃষকরা দৈনিক মজুরী ১ মন ধান কিংবা ৬/৭শ’ টাকা শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলেও শ্রমিকদের অতিরিক্ত দিন মজুরী দিয়েও ধান উত্তোলন করতে পারলে লাভবান হবেন কৃষকরা। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর অকাল বন্যার পানিতে কৃষকদের জমিগুলো তলিয়ে যায়। যার ফলে এ জেলার কৃষকরা ধানের উৎপাদন করতে পারেননি।
এবার কৃষি সম্প্রচার অধিৃদপ্তর জেলার ১লাখ ১৫ হাজার জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করলেও কৃষকরা জেলার ১লাখ ২১হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেন। কৃষকরা জমিগুলোতে এবার বাম্পার ফলন উত্তোলন করার স্বপ্ন দেখছেন। এর মধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় শতকরা ১১ ভাগ জমি কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। পাকা অবস্থায় আরো ২৮ ভাগ জমি হাওরে রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমান শ্রমিক না পাওয়া জমির পাকা ধানগুলো কাটতে পারছেন না।
শিলা বৃষ্টিতে জেলার সুবিদপুর ও মক্রমপুর ইউনিয়নের কৃষকরা কিছু ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছে। অপর দিকে ইদানিং ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কৃষকরা ফলন উত্তোলন নিয়ে দুঃচিন্তার মধ্যে পড়েছেন। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন শ্রমিক সংকট নিরসন ও আবহাওয়া ভাল থাকলেও বাম্পার ফলন গড়ে তুলতে পারবে। গতকাল সরে জমিনে বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে কৃষকদের সাথে এ প্রতিনিধি সাথে কৃষকদের কথা হলে তারা জানান, গত বছর তাদের জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলোতে ধান চাষ করেন। জমিগুলোতে ফলন বাম্বার হয়েছে।
তবে সম্প্রতিকালে শিলা বৃষ্টিতে সুবিদুপর ইউনিয়নের আতুকুড়া, সুবিদপুর, সুনারু, মক্রমপুর ইউনিয়নের মক্রমপুর, শাহপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের জমির ধান ঝড়ে যায়। কিছু কাঁচা জমির ধানগুলোতে ছিটা ধরে। তারপরও কৃষকরা বাকি জমিগুলো থেকে ফসল উত্তোলন করার আশায় স্বপ্ন দেখতে থাকেন। আতুকুড়া গ্রামের কৃষক তাউছ মিয়া জানান, ১৬ কের জমি রমজা এনেছিলেন। এর মধ্যে ৫ কের জমি কেটেছেন। প্রতি কের জমি কাটতে গিয়ে ৪হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। তিনি বলেন- শ্রমিকদের অভাবে বাকি জমিগুলো কাটতে পারছেন না।
বৃষ্টি বাদল না হলে ও সঠিক ভাবে জমি কাটতে পারলে ভাল ফলন উত্তোলন করতে পারবেন। একই গ্রামের নুরুল আমিন জানান, তাদের পরিবার অন্যান্য পরিবারের মত কৃষির উপর নির্ভশীল। কৃষির উৎপাদনের টাকা দিয়ে দুই ভাইয়ের পাইভেট ইনভারর্সিটি লেখাপড়া খরচসহ অন্যান্য ভাই ও বোনদের কলেজ ও স্কুলের খরচ চালাতে হয়। গত বছর তারা ৫০ কের জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানি জমিগুলো তলিয়ে নেন। এতে পরিবারের খরচসহ ভাই, বোনদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে তাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে। এবারও তারা সেই ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আবারও বোরো ধান আবাদ করেছেন। জমিগুলোতে ফলনও হয়েছিল বাম্পার। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে শিলা বৃষ্টিতে তাদের কিছু জমির ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন- বর্তমানে শ্রমিক অভাবে জমিগুলো কাটতে পারছি না। এখনও শ্রমিকদের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছি। কখন শ্রমিক পাবো আর ধান কাটবো। অপর দিকে আকাশে ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় হলে আবারও আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তবু আমরা কাঙ্খিত ধান উত্তোলনের আশায় রয়েছি। অনেক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, যাদের কম জমি রয়েছে, তারা নিজেরা কাটছেন। সে ক্ষেতে তাদের স্কুল ও কলেজে পড়–য়া ছেলেকে ধান কাটার কাজে লাগাচ্ছেন। আতুকুড়া গ্রামের হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রাশেদ খান জানান, তারা ৪ ভাই। জমি করেছেন ১০ কের। সেই জমিগুলো রাশেদসহ তার ভাইয়েরা মিলে কাটছে। রাশেদ জানান, আমাদের এলাকার যে সব কৃষকরা বেশি জমি আবাদ করেছেন শ্রমিক সংকটের জন্য তারা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রচারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, চলতি মৌসুতে হবিগঞ্জ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নিধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর।
কিন্তু ১ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। অথাৎ লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ৬হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। সার্বিক অবস্থায় বিবেচনা করে এবার ফসল ভাল হয়েছে। প্রকৃতি যদি আমাদের অনুকূলে থাকে তাহলে আমরা ভাল ফলন উত্তোলন করতে সক্রম হব। ইতিমধ্যে জেলায় শতকরা ১১ ভাগ জমি কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। পাকা অবস্থায় আরো ২৮ ভাগ জমি হাওরে রয়েছে।
কিন্তু শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা ধানগুলো কাটতে পারছেন না। আমরা পাকা ধানগুলো তারাতারি কাটার জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধান কাটার রিওপা মেশিনসহ অন্যান যন্ত্র দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছি। আমরা আশা করছি, ফসলের অবস্থা ভাল থাকায় প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ টন ধানের উৎপাদন হবে। কিছু হাওরে হেক্টর প্রতি ৪টন হবে। সে হিসেবে আমার যদি ৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন গড় উৎপাদন ধড়ি তাহলে এবার বোরো থেকে চাউল উৎপাদন হবে ৫লক্ষ মেট্রিক টন।
Leave a Reply