এক কন্যার প্রাণ পিতার হাতে নিভে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ::হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের কুড়িশাইল বেগমপুর গ্রামে মতিলাল দাস (৫০) নামের এক পিতা নিজ কন্যা পূর্ণিমা রানী দাস (২৫)-কে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সারে ১০টার দিকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক কলহের জেরে ঘরে বসেই মেয়েকে দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন মতিলাল দাস। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘাতক পিতাকে আটক করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত পূর্ণিমা রানী দাস দুই সন্তানের জননী। তার স্বামীর বাড়ি বানিয়াচং উপজেলায় ছন্দলপুর গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এ নিয়ে স্বামী অসন্তুষ্ট থাকায় ছয় মাস আগে পূর্ণিমাকে বাবার বাড়ি নবীগঞ্জে পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু সেখানে এসেও তার আচরণে পরিবর্তন আসেনি। স্থানীয়রা জানান, পূর্ণিমা প্রায়ই মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলতেন, যা নিয়ে গ্রামজুড়ে সমালোচনা চলত। এ কারণে পিতা মতিলাল দাস, যিনি একজন ধর্মীয় প্রকৃতির মানুষ ও নিয়মিত গীতাপাঠ করতেন,চরম লজ্জা ও মানসিক চাপে ছিলেন।
গ্রামবাসীর বরাতে জানা যায়, দুই দিন আগে পূর্ণিমা দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে ঢাকায় যান। রবিবার সকালে ফিরে এসে চাচার বাড়িতে ওঠেন। খবর পেয়ে পিতা মতিলাল দাস সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করেন তার এই আচরণ নিয়ে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
পুলিশ জানায়, বাড়িতে ফিরে পূর্ণিমা ঘুমিয়ে পড়লে মতিলাল দাস রাগের মাথায় ঘরে রাখা দা দিয়ে মেয়ের গলায় আঘাত করেন। পরে তিনি নিজেই গ্রাম পুলিশকে খবর দিয়ে মেয়েকে নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নবীগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে। পূর্ণিমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, মানসিক যন্ত্রনার কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহতের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,ঘটনাটি সম্পূর্ণ পারিবারিক কারণে ঘটেছে। এর সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। লাশ ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে এ মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এক কন্যার প্রাণ পিতার হাতে নিভে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা