গোয়ালন্দে দরবারে হামলা, কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ

ডেস্ক রিপোর্ট ::রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ‘ইমাম মাহাদি’ দাবি করা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদী জনতা। এর আগে সেখানকার দরবার শরিফ ও বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে দরবারের ভক্ত, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের দুটি গাড়ি।

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান।
এদিন জুমার নামাজের পর ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গোয়ালন্দ উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলান জালাল উদ্দিন, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী খান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মণ্ডলসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ।
পরে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে প্রশাসন তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। আহত হন ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২ জন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, মিছিল নিয়ে প্রথমে নুরুল হকের আস্তানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন দরবারের লোকজন ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অপর পাশ থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকশ লোক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দরবারে হামলা চালান। এ সময় ভক্তদের কয়েকজনকে বেধড়ক পেটানো হয় এবং নুরুল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হন। পরে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস থেমে থেমে কাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে দরবার শরীফ গড়ে তোলেন নুরুল হক। গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান নুরুল হক। ওই দিন রাতে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দরবারে তার লাশ দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেম সমাজ।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের দরবারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে উপজেলা ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।

এই কর্মসূচি ঘিরে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ আলেম-ওলামা ও দরবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সভা করে। শুক্রবার সকালে রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. নুরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দরবার শরীফ পরিদর্শন করেন। এসময় তারা দরবার কর্তৃপক্ষ শর্ত পূরণ করেছে বলে জানান।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. নুরুল ইসলাম বলেন, দাবির মধ্যে কবর নিচু করা হয়েছে। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে এবং মূল দাবি মেনে নেওয়ায় আগামী শুক্রবারের ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’সহ অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে দরবারের ভক্তরা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আলেম-ওলামাদের দাবির প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ দরবার শরীফের পীর নুরাল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবর উঁচু থেকে নিচু করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দরবারে ইসলামের সব নিয়মকানুন পালন করা হয় দাবি করে ভক্ত মেহেদি আল আমিন বলেন, আলেম ওলামাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘নুরাল পাগলা’র কবর উঁচু থেকে নিচু, কবরের দেয়ালের রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে মুসলমান ও সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়া এখানে কেউ আসে না।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল হক ‘নুরাল পাগলা’র মৃত্যু হয়। এরপর তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে মাটি থেকে কিছুটা উঁচু বেদিতে তাকে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি তোলেন ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাড়ি ও দরবারে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় ইউএনওর সরকারি গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহতের সংখ্যা এখন বলা যাচ্ছে না।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটবে তা ধারণা করা যায়নি। হামলায় রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিব আহত হন। এছাড়াও ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে রাজবাড়ীর এসপির নেতৃত্বে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ২২ জন আহত রোগী এসেছেন। তারমধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সূত্র : সমকাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা