ডেস্ক নিউজ ::
বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির অন্যতম প্রধান ও প্রাচীন সাংস্কৃতিক উৎসব। এটি প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১লা বৈশাখ) উদযাপিত হয় এবং নতুন বছরের আগমনের আনন্দ সবাই একসাথে ভাগ করে নেয়। এ দিনটি শুধু একটি ক্যালেন্ডারের সূচনাদিবস নয়, বরং এটি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ ও মিলনের প্রতীক।
ইতিহাস ও উৎপত্তি
বাংলা সনের সূচনা হয় সম্রাট আকবরের সময়ে। কৃষিকাজ সহজ করতে হিজরি চান্দ্রসনের পরিবর্তে সৌরভিত্তিক নতুন সন চালু করা হয়, যাকে বলা হয় ‘ফসলি সন’। এই সনের সূচনা হয় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে, যা পরে ‘বাংলা সন’ নামে পরিচিতি পায়। এতে কৃষকদের জন্য খাজনা নির্ধারণ সহজ হয় এবং বছরের শুরুতে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু হতো।
নববর্ষের পূর্বপ্রস্তুতি
নববর্ষকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয়, নতুন পোশাক কেনা হয় এবং পরিবারে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা হয়। ব্যবসায়ীরা পুরাতন হিসাব-নিকাশ শেষ করে হালখাতা খোলেন এবং ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করান। এটি ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেও বিবেচিত।
নববর্ষের দিন
নববর্ষের দিন সকালে অনেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে বের হন। পুরুষরা পরে পাঞ্জাবি-পাজামা আর নারীরা পরে শাড়ি, বিশেষত লাল-সাদা রঙের। বিভিন্ন স্থানে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকগান, নৃত্য ও পান্তা-ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করা হয়। ঢাকায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা ইউনেস্কো কর্তৃক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।
বাংলা নববর্ষের সামাজিক তাৎপর্য
বাংলা নববর্ষ ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবার মিলনের একটি উৎসব। এটি বাঙালির জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। নববর্ষ মানুষকে নতুন আশা ও প্রেরণার মাধ্যমে এগিয়ে চলার সাহস জোগায়।
উপসংহার
বাংলা নববর্ষ শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয় ও ঐক্যের উৎস। নতুন বছরে পুরনো দুঃখ ভুলে সবাই নতুন করে পথচলা শুরু করে। তাই এই দিনটির আবেদন সর্বজনীন ও চিরন্তন। “এসো হে বৈশাখ” ধ্বনিতে শুরু হয় নতুন দিনের যাত্রা, আর বাঙালি জাতি তাকে হৃদয়ের গভীর থেকে গ্রহণ করে।
Leave a Reply