মতিউর রহমান মুন্না::হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুজে পেয়েছে বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও বেকার নারীরা। আর এসব নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন আবার অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিজেরাই প্রতিষ্ঠান খোলার।
জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে উপজেলার বেকার নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৩ মাসব্যাপী আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এতে ৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষক দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সেলাই প্রশিক্ষনে ৩০ জন, ও আইজিএ প্রকল্পেন মাধ্যমে ব্লক-বাটিক ও বিউটিফিকেশন ট্রেডে ২০ জন করে ৪০ জনসহ মোট ৭০ জন নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এতে তারা ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তাদের মধ্যে বিধবা হেনা রাণী দাশ নামের এক সেলাই প্রশিক্ষনার্থী বলেন, “আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে আমি অসহায় অবস্থায় ছিলাম, মহিলা বিষয়কের এই ট্রেনিংয়ে ভর্তি হয়ে এখন অনেক কাজ শিখেছি এবং বাড়িতে কাজ করে আয় করে সংসার চালাচ্ছি।”
ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষনার্থী তাসলিমা তরফদার বলেন, এখানে এসে আমি ব্লক বাটিকের কাজসহ অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। পূর্বে আমার এসব সর্ম্পকে কোন ধারণাই ছিল না। এখানে কাজ শিখার পর আমি অর্ডারও নিতে পারছি। আমি নিজে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করতেছি।’ তিনি আরো বলেন- ‘আমার মতো যারা লেখা পড়া করে বেকার আছে, কোন কাজকর্ম পাচ্ছেনা তারা এখানে এসে কাজ শিখে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং নিজের পরিবারকে স্বচ্চলতার দিকে এগিয়ে নিতে পারবে।’
বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষনার্থী নাজমা বেগম বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই উদ্যোগের কারণে আমরা বিউটি পার্লারের যাবতীয় সকল কাজ শিখতে পেরেছি এখন আমরা নিজেই প্রতিষ্ঠান খোলে কাজ করতে পারবো।’
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলে। প্রতি ৩ মাস করে বছরে ৪টি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়। সম্পূর্ণ আয়বর্ধক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মহিলাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে। প্রশিক্ষাণার্থীরা প্রশিক্ষন নিয়েই সফলতার আভাস পাচ্ছেন বলে জানান প্রশিক্ষকরা।
সেলাই প্রশিক্ষক অনুপা রাণী বলেন, তাদেরকে অনেক ডিজাইনের পোষাক তৈরী ও সেলাইর যাবতীয় সকল কাজ শেখানো হয়েছে। তারা এখন নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারবে।
ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষক তাহমিনা আক্তার বলেন, প্রশিক্ষণে ব্লকের শাড়ী, বিছনা চাদর, টেবিলে কাভার, বিভিন্ন বাটিক শেখানো হয়েছে। এখানে কাজ শিখার পর ইতিমধ্যে কয়েক জন আসছে পহেলা বৈশাখের শাড়ী তৈরীর অর্ডার পেয়েছেন। এই প্রশিক্ষণে বেকার মেয়েদের বেকারত্ব দূর হবে বলে আশাবাদী তিনি।
বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষক সুলতানা আক্তার জানান, আমাদের বিউটিফিকেশনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দক্ষতার সহিত কাজ করতে পারবে। এখানে বিউটি পার্লারের সব ধরনের কাজ শিখানো হয়েছে। এখানের প্রশিক্ষনার্থীরা নিজেও প্রতিষ্ঠান খোলে কাজ করতে পারবে আরো লোকজনকে কাজে লাগাতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মীর তারিন বাশার লীমা বলেন, বর্তমান সরকার হচ্ছেন নারী বান্ধব সরকার। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, তার অধিদপ্তরের উদ্যোগে নবীগঞ্জে ৩ টি ট্রেডে মোট ৭০ জন বেকার শিক্ষিত নারী প্রশিক্ষন নিচ্ছেন। এভাবে ৩ মাস অন্তর অন্তর বছরে ৪টি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়। ৩ মাসব্যাসী প্রশিক্ষন শেষে সনদ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে যারা ক্ষুদ্র ঋন নিতে চাইবে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও এই প্রশিক্ষনে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়েও ধারণা দেয়া হয়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণ শেষে অধিকাংশ নারী নিজ উদ্যোগে পারিবারিক কাজের ফাঁকে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে না পারলেও তারা একদিন এ প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে আয়-রোজগারের পথ খুজে নেবেন বলে আশাবাদী তারা।
Leave a Reply