কানাইঘাটে ইউএনও’র অভিযান, অর্ধ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধ্বংস, ৬জনকে জরিমানা

কানাইঘাট প্রতিনিধি:: গতকাল মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিলেটের কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধে আদেশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খানের নেতৃত্বে কোয়ারিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
আদালতের আদেশ কার্যকর করার জন্য আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে থানা পুলিশকে সাথে নিয়ে কোয়ারীতে অভিযানে নামেন নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার মাহবুবুর রহমান। এ সময় তিনি কোয়ারী এলাকায় ২টি ফেলুুডার, ২টি স্কেভেটর, পাথর ভাঙ্গার ৮টি ক্রাশার মেশিন, ১ হাজার ফুট পাথর তোলার পাইপ সহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধ্বংস ও পাথর পরিবহনের অভিযোগে ৬ জনকে আটক করে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৭ (১) ধারায় কোয়ারী এলাকার ডাউকেরগুল গ্রামের হাবিবুর রহমানকে ২ লক্ষ টাকা এবং পাথর পরিবহন ও অপসারনের সাথে জড়িত থাকার দায়ে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জয়নাল আহমদ, ওয়াজিদ আলম, তজম্মুল আলী, জুবায়ের আহমদ এবং কিশোরগঞ্জের মামুন রশিদ একই ধারায় এ ৫ জনকে ৪৯ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
অভিযানকালে নির্বাহী কর্মকর্তা পাথর ব্যবসায়ীদের উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে এখন থেকে কোয়ারীতে সব ধরনের কার্যক্রম ও পাথর অপসারন, পরিবহন বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কেউ আদালতের আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন। কোয়ারীতে মজুদকৃত পাথর সরকারের সম্পত্তি, তাই এই পাথর কেউ যদি পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়াই পরিবহন অথবা স্থানান্তর করার চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল কোয়ারীর লীজের মেয়াদ শেষ হলে কোয়ারীর সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ পাথর পরিবহনের জন্য আরো সময় চেয়ে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি ব্রেঞ্চে রীট আবেদন দাখিল করলে বিজ্ঞ বিচারক কোয়ারীতে মজুদকৃত পাথর ১৫ জুন পর্যন্ত অপসারণের সময় দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাথর অপসারণ বা পরিবহন করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এমতাবস্থায় কোয়ারীতে কোটি কোটি টাকার পাথর মজুদ থাকার কারনে পাথর পরিবহনে সময় বর্ধিত করার জন্য মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গত ৯ জুন সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি জেবিএম হাসানের ব্রেঞ্চে আবেদন করলে আদালত তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ১ মাসের সময় দেন পাথর পরিবহনের জন্য। এদিকে- কানাইঘাটের নজরুল ইসলাম ও খুরশেদ আলম শিপলু একই আদালতে সময় বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। তাদের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভার্চুয়াল কোর্টে উভয় পক্ষের শুনানী হয়। শুনানী শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান পূর্বের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন। আদালতের এ আদেশের প্রেক্ষিতে এখন থেকে কোয়ারীতে কোন কার্যক্রম কেউ চালাতে পারবে না বলে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান জানান।
নির্বাহী কর্মকর্তা কোয়ারীতে অভিযানের সময় পাথর পরিবহন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরও তিনি অভিযান শেষ করে চলে আসার পর কোয়ারী থেকে অসংখ্য ছোট বড় পাথরবাহী বলগেট, স্টীমার সরকারের রয়্যেলিটি ফাঁকি দিয়ে নৌপথে পাথর নিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আদালতের স্থগিত আদেশের কারণে কোয়ারীতে মজুদকৃত কোটি কোটি টাকার পাথর পরিবহন সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে পৃথক রিট মামলা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পাথর ব্যবসায়ীরা। আদালতের নির্দেশের কারণে পাথর পরিবহনে বিলম্ব হতে পারে বলে অনেক পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা