নোয়াখালীতে এবারও ব্যয়বহুল ও দেশ সেরা দুর্গা প্রতিমা নিয়ে পূজা শুরু

নোয়াখালী থেকে নবীন ::সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নোয়াখালীতে ১৬২টি পূজা মন্ডপে পুজা শুরু হয়েছে। সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হলো। এ উপলক্ষ্যে পূজা মন্ডপ ও তার আশপাশ এলাকা রকমারি আলোকসজ্জাসহ বর্ণালী বাহারে সাজানো হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মাখন লাল দাস জানান, এবার নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১শ’ ৬২টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, দেশ ও জাতির শান্তি-মঙ্গল কামনায় শুরু হয়েছে দুর্গা পূজা। সারা দেশের ন্যয় নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় হিন্দু ধর্মালম্বীরা পালন করছে এ বৃহত্তম উৎসব। এবারও দেশ সেরা ও ব্যয়বহুল পূজার আয়োজন হয়েছে জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীর বেশ কয়েকটি মন্ডপে।

এসব মন্ডপগুলোতে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা পূরাকীর্তি, ঐতিহাসিক পটভুমির থিম বা আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে পূজা মন্ডপ। চৌমুহনীর বিজয়া মন্ডপ সাজানো হয়েছে হিন্দি ছায়াছবি বাহুবলির মহেষপতি রাজপ্রাসাদের আদলে, ত্রীভূজে জীবন্ত দুর্গা মায়ের দর্শণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, সমুদ্রের তলদেশের এবং হরপার্বতীর আদলে করা হয়েছে দশভূজা মন্ডপ, সীতার পাতাল গমনসহ নানা থিমও রয়েছে মন্ডপে।

চৌমুহনীর বিজয়া মন্ডপের সদস্য জয় ভুঁইয়া জানান, এবছর তাদের মন্ডপের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। প্রতি বছরই তারা মন্ডপে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। মায়ের প্রতিমাকে ঠিক রেখে মূলত তারা মন্ডপ সাজান নানা আদলে। প্রতি বছরই নোয়াখালী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাহির থেকে ভক্ত-দর্শনার্থীরা তাদের মন্ডপে পূজা দেখতে আসেন। তাই ভক্ত-দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখেই এ বছর হিন্দি ছবি বাহুবলির মহেষপতি রাজপ্রাসাদের আদলে সাজানো হয়েছে মন্ডপকে।

চৌমুহনীর আরেকটি পূজা মন্ডপের নাম দশভূজা। ওই মন্ডপে প্রধান শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাশ করা শিল্পী বিশ্বজিত পাল। এ শিল্পী বলেন, প্রায় আড়াই মাস পূর্বে কাজ শুরু করেছেন। রাত-দিন খেটে সমাপ্ত করা হয়েছে প্রতিমা সাজানো ও মন্ডপের কাজ। লাইটিংয়ের কাজ শেষ করতে আজ শেষ হয়ে যাবে। মায়ের ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কাছে অনেক ভালো লাগবে এ মন্ডপের প্রতিমা।

নোয়াখালী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার শীল জানান, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এবারের দুর্গাপূঁজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কারন কয়েকমাস পরে জাতীয় নির্বাচন। আর তার আগেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যে দুর্গাপূজার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। নির্বিঘেœ যাতে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হয় এ বিষয়ে আমরা পূজা উদযাপন পরিষদ কাজ করে যাচ্ছি। এ উৎসবটি যেন নিশ্চিন্তে নিরাপদে পালন করতে পারেন তার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। তিনি আরো জানান, দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও সেরা পূজা করা হয় নোয়াখালীর চৌমুহনীতে।

পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ জানান, গত বারের চেয়ে এবার দুটি পূজা মন্ডপ বেড়ে নোয়াখালীতে ১৬২টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সামনে নির্বাচন, তাই এ মুহুর্তে দুর্গাপূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাথায় রেখে পূজা মন্ডপগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়োজকদের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী ও কাজ করছে। এর বাহিরে সাদা পোশাকে পুলিশ ও পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম ও রয়েছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল টিম, সাদা পোশাকে পুলিশও থাকবে সকল পূজা মন্ডপে। আশা করছি প্রতিবছরের ন্যায় এবার ও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্নভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা