নবীগঞ্জ উপজেলার একশ মন্ডপে শারদীয় উৎসব দূর্গাপুজার ব্যাপক প্রস্তুতি, উৎসবের আমেজ

উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)থেক

নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ৯০ টি ও পৌরসভায় ১০টি মিলে ১০০ টি পূজার মন্ডপে বছর ঘুরে আবারো হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজার ব্যাপক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে জোরেশোরে শুরু হয়েছে। আগামী ১১ অক্টোবর সোমবার ষষ্টীবিহিত পুজার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। আনন্দময়ীর আগমনে ধনী-গরিব আবালবৃদ্ধ সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে যেন আনন্দের কমতি নেই কোন অংশেই। বাঙ্গালী হিন্দুদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজার আগমনী সুর ইতিমধ্যে সকলের মাঝে বিরাজ করছে। প্রতিটি পুজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পাদন করার জন্য দিনরাত নিরবিছিন্নভাবে কাজ করে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করছেন বলে জানিয়েছেন নিয়োজিত প্রতিমা শিল্পী সঞ্জত পাল । প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করে রং তুলির আছড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজও শুরু করে শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমা রঙ্গের চিত্রশিল্পীরা। তারপর মন্ডপ সাজসজ্জার কাজ শেষ করলেই উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেন সবাই। তাই শারদীয় এ পুজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে বিপুল আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা ঘাটতি নেই বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক লোকজনের মাঝেও । বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য সাধারন মানুষের মাঝে উৎসবের উদ্দীপনা কিছুটা কম হলেও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুজার আনন্দ ভাগাভাগি করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

শাস্ত্রমতে জানাযায়, এ বছর দেবীর ঘোটকে
আগমন ফল ছত্রভঙ্গ বসুন্ধরা এবং দেবীর দোলায় গমন করবেন ফল দোলায়াং মরকং ভবেৎ । সমাজের সকল আসুরিক শক্তির বিনাশ সাধন করে সর্বত্র শান্তি স্থাপনের মুলমন্ত্রই হলো শারদীয় দুর্গাপুজার মুল উদ্দেশ্য। সারা দেশের ন্যায় এ বছর নবীগঞ্জ ১৩টি ইউনিয়নে ৯০ টি এবং পৌরসভায় ১০ টি মন্ডপে সাড়ম্বরে পূজা অনুষ্টিত হবে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় এ বছর সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ ও আনসার বাহিনীর লোক নিয়মিত সময় না থাকায় সেচ্ছাসেবকরাই প্রতিটি পুজামন্ডপে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া উপজেলায় ১০০ টি পুজামন্ডপের জন্য নবীগঞ্জ থানা পুলিশের ১৩ টি মোবাইল টীম,৫ টি স্টাইকিং ফোর্সসহ সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। ইতিমধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলা ও থানা প্রশাসন শারদীয় দুর্গাপুজায় যথাযথভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজার রাখতে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছেন। এখন শুধু মাত্র অপেক্ষার পালা। আর মাত্র ৬ দিন পরেই প্রতিটি পুজামন্ডপে পঞ্চমীর বোধনের মাধ্যমে অসুর শক্তি বিনাশীনি দেবী দুর্গা এ মর্ত্যধামে আবাহন করবেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি সুখেন্দু রায় বাবুল ও সাধারন সম্পাদক নির্মলেন্দু দাশ রানা বলেন,আসন্ন শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পাদনের জন্য আমাদের সেচ্ছাসেবক ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল শ্রেনীপেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করি।

উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নারায়ন রায় ও সাধারন সম্পাদক ও প্রেসক্লাব সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলার ১০০ টি পূজা মন্ডপে সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা সাড়ম্বরে পালনের প্রস্ততি হাতে নেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকাসহ কিছু ঝুকিপূর্ন মন্ডপসহ সবকটি মন্ডপেই ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পাদনের জন্য ধর্মবর্ণ নিবিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করি।

বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গা উৎসব যাতে সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালন করা হয় এ ব্যাপারে সরকার সারাদেশে যথাযথাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জােরদার করেছেন।

ওসি ডালিম আহমদ বলেন,শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দরভাবে পালনের জন্য সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন বলেন,শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালনের জন্য সরকার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে সরকারী নির্দেশনা মেনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ আইনশৃঙ্গলা সভা ও করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন,হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালনে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। ধর্ম যার যার উৎসবের আনন্দ সবার এই শ্লোগানে আমরা সবাই উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করব।

নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা পালনে সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই।
আগামী ১১ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠীপুজার মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জের সকল পুজা মন্ডগুলোতে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গাপুজা শুরু হবে এবং ১৫ অক্টোবর শুক্রবার মহা দশমীবিহিত পুজার মাধ্যমে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পুজা সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ পূজাকে কেন্দ্র করে
সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জের সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে সর্বত্র যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে। তবে বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারনে এ বছর উৎসবের আমেজ অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পুজারীবৃন্দ। তবে পুজারীদের বিশ্বাস অসুর বিনাশিনী দেবী দুর্গাপুজার মাধ্যমে সমাজের সকল মহামারী ভাইরাস দুর হয়ে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা