দোয়ারাবাজারে জাল সনদে চাকরি : ২ শিক্ষক পলাতক

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ প্রতারণার মাধ্যমে জাল নিবন্ধন সনদে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করে এখন ফেসে গেছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার দুই হাইস্কুল শিক্ষক। তাদের একজন হলেন উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিতের শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ। তিনি একই ইউনিয়নের পান্ডারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবরু মিয়ার সন্তান। আরেক জন হলেন একই বিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক রেজাউল করিম। তিনি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার বরবড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দবির উদ্দিনের সন্তান। শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক যাচাইয়ে এই দুই শিক্ষকের নিবন্ধন ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দোয়ারাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন। মামলার এজাহার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ফিরোজ আহমেদ ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর গণিতের শিক্ষক হিসেবে হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৫২০৯৫। ২০১১ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়। আর রেজাউল করিম ২০১১ সালের ০২ অক্টোবর একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৬০৯১৮। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর এমপিওভুক্ত হয়। উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন সংবাদপত্রে ‘দোয়ারাবাজারের হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরির অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের টনক নড়ে। এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ বরাবরে একটি স্মারক প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ এই ছয়জন শিক্ষকের সনদ যাচাই করে গত ৩ মার্চ একটি স্মারকে যাবতীয় তথ্যসমূহ প্রেরণ করেন। শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ এবং রেজাউল করিমের নিবন্ধন সনদ দালিলিক ভাবে জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের পূর্বক অফিসকে অবহিত করার নির্দেশ দেন এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছে জাল সনদধারী এই দুই শিক্ষক। তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে এই দুই পলাতক শিক্ষকের মেইন সার্টিফিকেট হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রহস্যজনক ভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এব্যাপারে হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনোব্দি থানায় কোনো জিডি পর্যন্ত করেননি।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফতেফুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, আমার বিদ্যালয়ে কোনো ভুয়া সনদধারী শিক্ষকদের ঠাঁই হবেনা। সবার সকল সনদপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। ইতোমধ্যে দুজনকে স্কুল থেকে বহিঃস্কার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সার্টিফিকেট গায়েব হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের যাবতীয় ফাইল ও কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকে। চাবিও উনার কাছে। সার্টিফিকেট কিভাবে গায়েব হলো তিনিই ভালো বলতে পারবেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাফিজ আলী সার্টিফিকেট গায়েব হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ২০১৮ সালে এই দুই শিক্ষক তাদের প্রয়োজনে বিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট তুলে নিয়েছিলেন। তাদেরকে সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও দেই দিচ্ছি বলে দেইনি। দোয়ারাবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, উপজেলার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদে কারোর চাকরির অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করা হবে। জাল সনদধারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। দোয়ারাবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ নাজির আলম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুইজন ভুয়া সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা অ্যাফেয়ার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা