নবীগঞ্জে বিয়ানায় কম্পন।। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ।। আন্দোলনে নামছেন স্থানীয়রা।। নিরপ্রেক্ষ পূণ:তদন্তের দাবি

ডেস্ক নিউজ:: নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাড এলাকার মাটির কম্পনকে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প হিসেবে দাবি করেছে পেট্রোবাংলার তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ওই এলাকায় শেভরনের খননকাজকে স্বাভাবিক রাখার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। গত বৃহস্পতিবার  বিকেলে এ কমিটির প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এ প্রতিবেদনে মূল ঘটনাটি আড়াল করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিবিয়ানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা ন্যাচারাল ভূকম্পন। এ সঙ্গে গ্যাসফিল্ড খনন বা ড্রিলিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতিবেদনে শেভরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন আজ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্রতিবেদন দেওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, নতুন কূপ খননকালে ভুল প্রক্রিয়ায় খনন করায় এ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী এ কম্পনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিপূরণ এড়াতে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
ইনাতগঞ্জ যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশাহীদ আলী আশা বলেন,এটা ন্যাচারাল ভূকম্পন না। আমরা খবর নিয়েছি। সারা দেশে কোথায়ও এ সময়ে ভূকম্পন হয়নি। এটা বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের মানবসৃষ্ট ভূকম্পন। তদন্ত কমিটি মনগড়া প্রতিবেদন দেখে আমরা হতাশ।
দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ছালিক মিয়া বলেন, ‘এ তদন্তের প্রতিবাদ করব আমরা। কারণ, সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়নি। এটা এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’
ইনাতগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান নোমান হোসেন বলেন, ‘এ রকম পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দেওয়া হবে, আমরা তা আগেই ধারণা করেছিলাম। আমরা এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তদন্তের দাবি করছি। পাশাপাশি আমরা এলাকাবাসীর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ শেভরন থেকে আদায় করতে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা অবস্থিত। এ গ্যাসক্ষেত্রের নর্থ প্যাডের পশ্চিমে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক, জামারগাঁও, রাধাপুর, রামেরগাঁও, মধুরা, সাদুল্লাহসহ ৪২টি গ্রাম আছে। গ্রামগুলোয় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। গত শনিবার রাতে ও পরদিন রোববার সকালে ভূমিকম্পের মতো কয়েক দফায় কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কিছুক্ষণ পরপর ভূমি কাঁপছিল। এ তীব্র কাঁপুনিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। অনেকে ছোটাছুটি করে আহত হন। উপজেলার দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ৭৬টি গ্রামে কয়েক শ বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এলাকাবাসী রাতেই গ্যাসক্ষেত্রের সামনে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এলাকাবাসীকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন ও পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. সালাহ উদ্দিনের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে কম্পনের কারনে যাদের বাড়িঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার( (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার। গত শুক্রবার তিনি ইনাতগঞ্জ ও দিঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে যাদের বঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তালিকা করেছেন। এ সময় সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান।
নবীগঞ্জ সহকারী কমিশনার ( ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন,ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়েছি। প্রতিটি গ্রামে যাওয়া সম্বব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি গ্রামের নামই তালিকা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা