নবীগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক।। ।। গ্রেফতার ১৪।। শান্ত থাকার আহবান এমপি’র

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরে দুই গ্রুপের চার ঘন্টাব্যাপী ভয়াবহ সংঘর্ষেম পুলিশ , সাংবাদিক, পথচারীসহ শতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকানপাঠ। তিনটি ব্যাংকের মধ্যে ভাংচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ৪৫রাউন্ড টিয়ারশেল, ১৫ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ ১৪ জনকে আটক করেছে।
নবীগঞ্জে কলেজ ছাত্র সৈয়দ তাহসিন হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’ গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হোন। এছাড়া বেশ কয়েকটি দোকান পাট ভাংচুর, মটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে বাহুবল সার্কেল এসপি আবুল খয়ের, ইউএনও অনুপম দাশ অনুপ,ওসি মাসুক আলীর নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কঠুর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গুরুতর আহত ৬ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ ও অন্যান্য আহতদের নবীগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৫টা থেকে সংঘর্ষের সূথত্রপাত হয়ে রাত ৯ টা এক টানা সংঘর্ষ চলে। নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায়  সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নিয়ে এ সংঘর্ষে সুত্রপাত হয় ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়- কলেজ ছাত্র তাহসিন হত্যার ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ দেখার সূত্র ধরে কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাতাবাদ গ্রামের সৈয়দ খালেদুর রহমান ও আনমনু গ্রামের পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়ার লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে এনাতাবাদ ও আনমনু গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এসময় চেয়ারম্যান খালেদের মালিকানাধীন রাজা কমপ্লেক্স. পুবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক , তাহসিন প্লাজা ও আনমনু গ্রামের বেশ কয়েকটি দোকানপাঠ ভাংচুর করা হয়। সবজি বাজার ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
চার ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাঠ বন্ধ করে দিগবিদিক ছুটোছুটি করে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রাত ৯টায় হবিগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠান হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আবু জাহির এমপি। অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাবার বুলেট, কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সংঘর্ষ চলাকালে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মুর্শিদ, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদসহ শতাধিক লোক আহত হন।
বিস্বস্থ সুত্রে জানাযায়, মঙ্গলবার রাতে কুর্শি ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদের মালিকাধীন রাজা কমপ্লেক্সের পিছনে ফুড কর্নারে দু’দল কলেজ ছাত্রদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।এর জেল ধরে সংঘর্ষ হয় এতে একজন কলেজ ছাত্র নিহত হয়।
এ সময় চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমানের নিজ গ্রাম এনাতাবাদের লোকজন কাউন্সিলর নানু মিয়ার মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগসহ ৩টি সাইকেল ভাংচুর করে। কাউন্সিলর নানু মিয়ার দোকানসহ একাধিক দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পাল্টা হামলায় রাজা কমপ্লেক্সের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাদাঁনো গ্যাস নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। এক পর্যায়ে বাহুবলের সার্কেল এসপির নেতৃত্বে হবিগঞ্জ থেকে একদল দাঙ্গা পুলিশ আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এসময় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা অনুমপ দাশ,সহকারী কমিশনার ভূমি শাহীন দেলোয়ার,ওসি মাসুক আলী,নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়াম্যান এমদাদুর রহমান মুকুল, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান সেফু, জেলা পরিষদের সদস্য শেখ সফিকুজ্জামান শিপন, নবীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম তালুকদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ মিলু, ইউপি চেয়ারম্যান, নির্মেলেন্দু দাশ রানা, ইউপি চেয়ারম্যান নোমান আহমদ সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য আঃ মালিক সাবেক প্যানেল মেয়র এটিএম সালামসহ সাংবাদিক জনপ্রতিনধি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সংঘর্ষেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে অপ্রাণ প্র্রচেষ্টা করেছেন।
কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাতাবাদ গ্রামের সৈয়দ খালেদুর রহমান জানান, তিনি তার মার্কেটেরসিসি টিভির ফুটেজ দেখানোর জন্য আনমনু গ্রামের লোকজন তাকে সন্দেহ করে তার মালিকাধীন মার্কেটে হামলা করে সিসি ফুটেজ ছিনতাই করার চেষ্টা করে, এনিয়ে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।
আনমনু গ্রামের পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান জানাজার নামাজে তার গ্রামের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে সংঘর্ষ হয়।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলেন সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।  তিনি হ্যান্ড মাইকে উভয় পক্ষকে সংঘর্ষ পরিহার করে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে ঘরে ফিরে যাবার আহবান জানান।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাসুক আলী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল  কাদানে গ্যাস ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন তার থানার ওসি তদন্তসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। শহরে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা