নবীগঞ্জ’৯৫ ব্যচের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও সাজেক ভ্রমন

উত্তম কুমার পাল হিমেলঃপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন এবং বাংলাদেশের পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তার সমারোহে রাঙ্গামাটির ছাদ বলে খ্যাত সাজেক ভ্যলী ভ্রমন হৃদয়ে সত্যিই এক অফুরন্ত আনন্দের অনুভূতি জানান দিয়েছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এস এসসি ১৯৯৫ ব্যাচের টেকনাফ বন্ধুদের সার্বিক সমন্বয়ের সহযোগীতায়। সারাদেশের বন্ধুদের নিয়ে এমন একটি আনন্দঘন পরিবেশে ভ্রমন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমাদের ব্যাচের বন্ধু ইউনুছ এবং সাঈদসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।  এস এসসি ‘৯৫ ব্যাচ সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি ইউনাইটেড ব্যাচ বলা যায়। সারাদেশের বিভিন্ন  জায়গায় প্রায় বছর জুড়েই থাকে এই ব্যাচের বিভিন্ন আয়োজন। সারাদেশের ২ শতাধিক বন্ধু এবং অনেকের পরিবারসহ এক মিলন মেলা
 অনুষ্টিত হলো গত ২ ও ৩ ফ্রেবুয়ারী টেকনাফের রুপসী বাংলায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ (মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার)। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্র প্রেমীদের কাছে এটি ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। বিখ্যাত লেখক, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবির মাধ্যমে এই দ্বীপটির পরিচিতি আরো বেড়ে যায়।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের কিছু প্রাপ্তি হলো  টেকনাফ থেকে জাহাজ ছাড়ার পরপরই সাদা গাঙচিল গুলো এমনভাবে সফর সঙ্গী হয় যা আমার স্মৃতিপটে লেগে থাকবে আজীবন।  প্রায় আড়াই ঘন্টার জাহাজ ভ্রমনে মনে হয়েছে আমাদের সাথে কোলাহলে মেতে উঠা তাদের একটি নেশায় পরিনত হয়েছে।  যে নেশায় তারা আমাদেরকে ছেড়ে যেতে চায়না। তাদের চেচামেচিতে হাসছে ভ্রমণকারী হাসছে আকাশ হাসছে পানি হাসছে সাগরের পাগলা হাওয়া। এক মুহুর্তের জন্যও তাঁদের কাছ থেকে চোখ সরানোর ইচ্ছে হবেনা যদি কেউ খুব বেশী ক্লান্ত বা অসুস্থ না হন। সৃষ্টিকর্তা যে কি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কল্যাণে রেখেছেন তা অকল্পনীয়। সেন্টমার্টিনে ফ্লায়িং ফিস খুবই সুপরিচিত একটি নাম, যা তাঁরা ফ্রাই করেই বেশি খায়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আছে , আমাদের দু তিন জাতের মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে যা খুবই সুস্বাদু ছিল।  বিশেষ করে মাছের ভর্তা আরো সু্স্বাদু ছিল। পরিবেশনা ছিল চমৎকার, আংশিক দুদিন ও একরাত্রি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে মনে হয় কয়েক মাস থেকেছি এমন আপন মনে হয়েছে জায়গাটি। ২  ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ থেকে শুরু হয়ে রাত ১২.৩০ পর্যন্ত চলে বন্ধুদের মিলন মেলার অনুষ্টান।যেখানে অনুভুতি ব্যক্তকরা,গান কৌতুকসহ অন্যান্য আনন্দদায়ক পরিবেশনায় ভরপুর। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার গান,সুরমা গাঙ্গের পাড়ও বাড়ী,শাহজালারের উত্তরসুরী,দেশ বিদেশে বেটাগিরি আমরা হক্কল সিলেটি,আমরা হক্কল সিলেটী গানটি পরিবেশন করেন,নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল। সাথে তাল মিলান সিলেট বিভাগের বন্ধু শামীম,সাজিদ,জুয়েল,মাসুক,মালেক,জামাল,রজতসহ আরো অনুষ্টানে যোগ দেওয়া সিলেট বিভাগের আরো অনেকেই। যা সারা দেশোর বন্ধুদের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
 যে কটেজে থেকেছি মালিক ও সহযোগীরা খুবই আন্তরিক তাদের  সাবলীল ভাষায় কথা বলাও নম্রতা দেখে কখনো মনেই হয়নি প্রথমবার দেখা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণকারীদের আনন্দ দেখে মনে হয়েছে সবাই এক পরিবারের বহুকাল ধরে একসাথে থাকা হয়েছে। বিদায়বেলা আমার কাছে এমন মনে হয়েছিল যে আপনজন ছেড়ে দূর প্রবাসে যাওয়ার মতই। পরে ৪ ফ্রেবুয়ারী ছিল সাজেক ভ্রমনের  উদ্দেশ্যে রওয়ানা। ৫ ফেব্রুয়ারী রবিবার সাজেক এ পৌছে রাত্রি যাপন করে রাতের সাজেক উপভোগ করি।
সাজেক উপত্যকা বা সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। বর্তমানে সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্য প্রায় সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। সারাবছরই সাজেক যাওয়া যায়। আর সাজেকে পাহাড়ধস বা রাস্তাধস এরকম কোন ঝুকি নেই। সাজেক রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট। আর ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কংলাক পাহাড়-এ কংলাক পাড়া অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করে। সাজেকের কলা ও কমলা বেশ বিখ্যাত। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। তাই সাজেক ভ্যালীকে বলা হয় রাঙ্গামাটির ছাদ।
নিজস্ব অনুভুতি থেকে বলা যায় আমরা যারা ভ্রমন পিপাসু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক টাকা খরচ করে ভ্রমনে যাই। কিন্তু বাংলাদেশের ভিতরেই যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি উপভোগ করার অনেক স্থান রয়েছে সেটা কখনো গুরুত্ব দেই না। সেটা একদমই অনুচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা