জগন্নাথপুরের হাওরে বোরো ধান কাটার অপেক্ষায় কৃষকেরা

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি :: বৈশাখ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। চারদিকে উৎসবের আমেজ শুরু হতে যাচ্ছে। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে হাওরে ও কৃষকের মনে। অল্প অল্প করে শুরু হয়েছে নতুন ধান কাটা। হাওরের পূবালী বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের হাওরাঞ্চলের চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে খেতে ধান কাটবেন কৃষকেরা। সেই সোনালি ধান মাথায় কিংবা কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবেন ঘরে।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার বোরো মৌসুমে ২ হাজার একশত ৮৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষাবাদ নির্ধারন করা হলেও লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশি হয়ে ২ হাজার তিনশত ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। বিশেষ করে এবার কৃষকদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জাতের নতুন হাইব্রিড চারা বিতরণ করা হয়েছে। নতুন জাতের ধান ৮৮, ৮৯, ৯২ চারা এবার প্রথম রোপন করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ফলন ভাল না হলেও এবার করোনার মধ্যেও বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্লিল) দুপুরে উপজেলার হাওর এলাকার চিরচেনা এ রূপের খন্ডচিত্র চোখে পড়ে। পূবালী বাতাসে ধান ক্ষেতে বাতাশে ধান গুলো দুল খাচ্ছে। হাওর পাড়ের কৃষক মনজু মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, সাপ্তাহ দিন পরে ধান কাটা শুরু হবে। করোনা ও রোজার মধ্যে ধান কাটা লাগবে। এ ব্যস্ততা চলবে বৈশাখজুড়ে। এবার বৈশাখ মাসে রোজা হওয়ায় পুরো এক মাস এত কষ্ট করতে হবে। তিনি মুচকি হেসে বলেন, আমরাদের লাগি ইতা কোনো কষ্ট না। এই ধান ঘরে তুলতে পারলেই ত সারা বছর সুখে থাকা যায়। তিনি আরো জানান, ফসল রক্ষা বাঁধ হয় নামে মাত্র। মূলত প্রকৃতির ওপরই তাঁদের ভরসা। আগাম বন্যা নিয়ে যত শঙ্কাও তাঁদের। বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ধান দ্রুত বাহির হচ্ছে।
উপজেলা জুড়ে হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার মৌসুমকে ঘিরে উৎসবের শেষ নেই। সেই দিন আসছে দিনভর পরিশ্রম করে ক্লান্ত-শ্রান্ত কিষান-কিষানিরা রাতে বাউলগান, যাত্রাগানসহ নানা লোকগানের আসর বসান। এভাবে বিনোদনের মাধ্যমে তাঁরা মানসিক প্রশান্তি লাভ করেন। এরপর মধ্যরাতে ঘুমাতে যান এবং ভোরে জেগে উঠে আবার ফসল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। প্রতি বছর সাত-আট দিন আগে হাওরে অল্প অল্প করে জমিতে ধান পেকেছে। গতবারের চেয়েও এবার বেশি ফলন হবে বলে আশা করেন কৃষকেরা। দুই দিন আগে থেকে ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। ফসল ঘরে তোলার পর নতুন চালের পিঠা বানানো হবে। সে সময় আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করে একসঙ্গে ধান তোলার উৎসব হবে বলে তারা জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি অফিসার শওকত ওসমান মজুমদার এ প্রতিনিধিকে জানান, এ মৌসুমে ২ হাজার একশত ৮৫ হেক্টর ধানের চাষাবাদ নির্ধারন করা হলেও লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে ২ হাজার তিনশত ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিকঢন ধান কৃষকেরা ঘরে তুলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা