নবীগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদ বাজার

সুমন আলী খাঁন, হবিগঞ্জ ॥ আর মাত্র ৪ দিন পরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। সারা দেশের ন্যায় হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। তরুণ-তরুণীরা সকাল থেকে দিনব্যাপী দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। বিপনী বিতান ও দোকানগুলোতে বাহারি ডিজাইন আর বিভিন্ন মডেলের পোশাক শোভা পাচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্যনীয়। ক্রেতারা রোদ-বৃষ্টি, গরমকে উপেক্ষা করেই ছুটছে ঈদ বাজারের দিকে। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতার পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের দোকান সাজিয়েছেন ঈদের পোশাক দিয়ে। যে কোনো উৎসবেই ছেলেরা তাদের প্রিয় পোশাক পাঞ্জাবি ক্রয় করেন আর ঈদ হলে তো কোনো কথাই নেই।

ঈদের কেনাকাটার তালিকায় টি-শার্ট, জিন্স হলেও পাঞ্জাবিটা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে আছে তাদের জন্য। ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম পোশাক পরতে হয় পাঞ্জাবি, তাই পাঞ্জাবি একটু বেশিই প্রাধান্য দেন তারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নবীগঞ্জ শহরের গোল্ডেন প্লাজা, রাজা কমপ্লেক্স, নুরানী মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, আরজু ফ্যাশন, এমবি প্লাজা, আউশকান্দি বাজারের কাজী ফ্যাশন, অনুপম বিপনী, জিয়া ফ্যাশন, শাহ্ জালাল বস্ত্র বিতান, দেবপাড়া বাজারের প্লাস পয়েন্ট, ফোর ষ্টার, এনডি বস্ত্র বিতান, ওলী ক্লথ ষ্টোর, সিটি পয়েন্ট, ইনাতগঞ্জ বাজার, পানিউম্দা বাজার, গোপলার বাজার, ইমামবাড়ী বাজারসহ উপেজলার বিভিন্ন ছোট বড় হাট বাজারে ঈদের কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

দোকান গুলোতে শিশু-মহিলা ও পুরুষের প্রচন্ড ভিড় দৃশ্যমান। এছাড়া ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও কাপড়রের সমাহার নিয়ে বসেছে। গরমের কথা মাথায় রেখে অনেকেই বেছে নিয়েছেন হালকা সুতি কাপড়। আর অল্প লাভে বেশি বিক্রির আশায় বেশির ভাগ পোশাক ব্যবসায়ীদের প্রথম টার্গেট হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। বিভিন্ন মার্কেটের ম্যানেজারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এখন অনেকে প্রথম রমজানের পর থেকেই ঈদের মার্কেট করে ফেলেন।

এর কারণ হলো রমজানের ঈদ যখন সামনে ঘনিয়ে আসে, তখন মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। এ কারণে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে আগেই ঈদের মার্কেটের কাজ শেষ করেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এখনও মার্কেটগুলোতে প্রবাসীর স্ত্রী সন্তান, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশার লোকজনই কেনাকাটা করছেন। চাকুরিজীবীরা বেতন ও ঈদ বোনাসের টাকা পাওয়ার পরই কেনাকাটা করবেন। নি¤œ আয়ের লোকজনও ঈদের ২/৩দিন পূর্বে ঈদ মার্কেট করে থাকেন। এবার ১৫ রমজান থেকে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ রমজান থেকে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাজার গুলোর তুলনায় আউশকান্দি বাজার, ইনাতগঞ্জ, পানিউ্দমা বাজারসহ বিভিন্ন হাট বাজারে গত বছরের তুলনায় এই ঈদ’র বাজারে কাপড়ের দামটা কিছুটা বেশি।

তবে প্রতিটা দোকানগুলো সাজানো হয়েছে রঙ-বেরঙের ডিজাইনের জামা-কাপড়ে। একটা অন্যটার তুলনায় আলাদা। দাম বেশি হলেও ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছেন দোকানগুলোয়। অনেক দোকানেই হাজার বারশ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে নিত্য নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি। সিয়াম সাধনার মাস ও গরমে ক্রেতারা খুঁজছেন নিত্য নতুন ডিজানের পোশাক। যার জন্য বেশির ভাগ দোকানিরাই দোকানে ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন রঙের ডিজাইন। ফুটপাতের দোকান গুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

এক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আসলে সাধ্যের মধ্যে থাকায় আমাদের এখানের বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ের চাহিদাটা একটু বেশি। তাই সকল ক্রেতার রুচিশীল পছন্দের কথা মাথায় রেখে প্রতিবারই আমরা নতুন নতুন ডিজাইনের কাপড় উপহার দিতে চাই সবাইকে। তবে এখনো পুরোপুরি কেনাকাটা শুরু হয়নি বলেও জানান তিনি। তবে ঈদকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন বস্ত্র বিতানগুলো ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা। এই ঈদে ক্রেতারা তাদের প্রিয়জনকে কি দেবেন, তারও তালিকা তৈরি করেছেন অনেকেই।

কেউ কেউ নিজের পছন্দের কাপড় গুলো পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। প্রচন্ড গরমে টিকতে না পেরে কেউ কেউ তারাতারি কেনা-কাটা শেষ করে রওনা হচ্ছেন বাড়ির পথে। দোকান গুলোতে নারীদের পোশাক শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, থান কাপড়ের দোকানসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। বিশেষ করে বাজার গুলোতে বিকেলে ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ পরিবার দল বেঁধে ঈদের কেনাকাটা করছেন। বাবা-মায়ের হাত ধরে ছোট্ট শিশুরাও নিজেদের পছন্দের পোশাকটা খুঁজে নিচ্ছেন দোকান গুলোতে থেকে। ঈদের কেনাকাটায় ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে নেই মেয়েরাও।

দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে নিয়ে অনেকেই খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দের জামা কাপড়। এমনই একজন ক্রেতা দীপা। তিনি তাঁর বোনকে নিয়ে এসেছেন জামা কেনার উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, এখনো বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখছি কিন্তু মনের মতো করে এখনো পাইনি। হয় তো অন্যান্য দোকান গুলোতে গেলে পেতে পারি। কাপড়ের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার বাজারে আগের তুলনায় কাপড়ের দাম একটু বেশি হলেও ঈদ হিসেবে তেমন একটা দাম বাড়েনি। কাপড়ের দাম সহনীয় আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা