স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কারণে করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না লক্ষাধিক ব্রিটিশ নাগরিক

মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, লন্ডন: কর্মীর অভাব, অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা ও রোগীদের কথা বিবেচনা করে ব্রিটেনের অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরকার করোনা ভ্যাকসিনের টিকা কর্মসূচীতে অংশ নিতে অপারগতা জানিয়েছে। এ কারণে করোনার ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না লক্ষাধিক ব্রিটিশ নাগরিক।

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার (এনএইচএস) করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিরোধী টিকা প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বহু জেনারেল প্র্যাকটিশনার (জিপি)। ফলস্বরূপ এক লাখের বেশি রোগী টিকা নিতে পারবেন না। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

খবরে বলা হয়, এনএইচএসের টিকা প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের কয়েক ডজন জিপি চিকিৎসালয়। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ইতিমধ্যেই তাদের কাজের চাপ বেশি ও কর্মী সংখ্যা কম। এর মধ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা কমিয়ে, টিকা প্রয়োগে কর্মী নিয়োজিত করলে রোগীদেরই বরং ক্ষতি হতে পারে।

আগামী সপ্তাহে ব্রিটেনে দ্বিতীয় দফায় ফাইজার ও বায়োএনটেকের করোনা টিকার প্রয়োগ কর্মসূচী চালু হতে যাচ্ছে। এতে প্রথমবারের মতো করোনা টিকা প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ নিতে যাচ্ছেন জেনারেল প্র্যাকটিশনাররা।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ম্যানচেস্টার, সাসেক্স, লিঙ্কনশায়ার, ইয়র্কশায়ার ও টেমস উপত্যকার বেশ কয়েকজন জিপি করোনা প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন না। ওই চিকিৎসালয়গুলোয় নিবন্ধিত রোগীদের অন্য কোথাও টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে স্থানীয় এনএইচএসকে।

প্রসঙ্গত, করোনা টিকার প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ নিতে হলে, এনএইচএস ও ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা অবধি, সপ্তাহে সাতদিন টিকা প্রয়োগ করতে হবে তাদের।এছাড়া, এনএইচএসের নতুন এক নিয়ম অনুসারে, কোনো রোগীকে টিকা দেয়ার পর ১৫ মিনিট পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গত মঙ্গলবার টিকা প্রয়োগ কর্মসূচীর প্রথম দিন দুই হাসপাতালকর্মীর মধ্যে টিকা গ্রহণের পর অ্যালার্জির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ ঘটনাও অনেক জিপিকে কর্মসূচীটিতে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করেছে।

ম্যানচেস্টারে জিপিদের মধ্যে অসন্তুষ্টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরটির প্রধান দুই প্রাথমিক সেবা নেটওয়ার্ক (পিসিএন) বা জিপি চিকিৎসালয়গুলোর সংগঠনই টিকা প্রয়োগ কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে না। এই সংগঠনগুলোর সদস্য ডাক্তারদের অধীনে প্রায় এক লাখেরও বেশি রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে চিটহ্যাম হিল ও ক্রাম্পস্যাল পিসিএন-এর রয়েছে আটটি চিকিৎসালয়। সেগুলোয় নিবন্ধিত রোগী রয়েছেন প্রায় ৫৬ হাজার। হায়ার ব্ল্যাকলি, হারপুরহেই ও চার্লস্টাউন পিসিএন এর অধীনস্ত নয়টি চিকিৎসালয়ে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার রোগী।

চিটহ্যাম হিল ও ক্রাম্পস্যাল পিসিএন-এর এক জিপি বলেন, ইতিমধ্যে কর্মী সংকটে ভুগছি আমরা। এর মধ্যে টিকা প্রয়োগের জন্য কর্মী নিয়োজিত করবো কিভাবে? অন্যান্য সেবা কমিয়ে, টিকা দেয়ার জন্য কর্মী নিয়োজিত করলে অবশিষ্ট রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো কিভাবে?

গত মঙ্গলবার থেকে ইংল্যান্ডজুড়ে ৭০টি ‘হাসপাতাল হাব’-এ ৮০ বছরের বেশি বয়সী, বৃদ্ধাশ্রমের কর্মী ও জটিল রোগে ভোগা এনএইচএস কর্মীদের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ২৫০টি পিসিএনের পারিবারিক ডাক্তারদের। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডজুড়ে পিসিএন রয়েছে ১,২৬০। সেগুলোর অধীনস্ত প্রায় ৭০০০ চিকিৎসালয়ে প্রাথমিক সেবা দেয়া হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা