দিনারপুরের পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর নির্দেশ

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জের পাহাড়ী অঞ্চল বলে খ্যাত দিনারপুর পরগনায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে কয়েকটি পাহাড় খেকো চক্র। পাহাড় সংরক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে দিনারপুরঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য্য হারিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এতে হতাশা দেখা দিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে। অবাধে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির ঘটনায় পাহাড় খেকোদের খুঁিটর জোর নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়। এছাড়া দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকায় ‘দিনারপুর পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপর্যয় চলছেই’ শিরোনামে একটি সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের সংবাদটি নজড়ে পড়ে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপির। তিনি খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দিনারপুর অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা ও পাহাড় খেকো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) সুলতান আহমেদকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্রে প্রকাশ, নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চল বাংলাদেশের পাহাড়ীয়া দ্বীপ হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করলেও পাহাড় খেকোদের নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে বেশী দিন পাহাড়ীয়া দ্বীপ হিসেবে অর্জিত খ্যাতি রাখতে পারবেনা আশংকায় ওই এলাকার সচেতন মহল। অবৈধভাবে পাহাড়ী এলাকায় জনবসতি জন্য প্রতিনিয়ত নির্বিচারে পাহাড় ও পাহাড়ী গাছ কাটা হচ্ছে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, পানিউমদা ও গজনাইপুর ইউনিয়নে ও বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট, পুটিজুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায়। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে ধ্বংসের পথে আজ এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ। পাহাড়কাটায় বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢালুতে বসবাসকারী লোকজনদের জীবন হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড় ধসে পাহাড়ী ঢালুতে বসবাসকারী অনেক মানুষ মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে পাহাড়খেকো চক্র কর্তৃক নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রতিনিয়ত কয়েকশত বছর ধরে গড়ে ওঠা দিনারপুর পরগনার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার দরুন জলবায়ু, পরিবেশ, মাটি, পানি ও প্রাণীবৈচিত্রের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সবুজ বনভূমি। তাছাড়া ইচ্ছামত পাহাড় কাটার ফলে বেশি বেশি ভূমিকম্পন হতে পারে বলে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা সূত্রে জানা যায়। এ দিনারপুর পরগনার মানুষের মধ্যে পরিবেশ ও পাহাড় সম্পর্কিত নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব এবং সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকা, পাহাড় রক্ষা ও কাটা সম্পর্কিত উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা না করা, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতার অভাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তিগত লাভ, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগের অভাবসহ ইত্যাদি কারণে দিন দিন পাহাড় কাটা বেড়ে চলছে।

অপরদিকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাহাড় কাটতে পারবে না, অন্যথায় আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ বছরের জেল কিংবা ১০ লাখ টাকার জরিমানা প্রদানের নিয়ম নীতি থাকলেও মানছেননা কেউই। এদিকে, গত ১০/১২ দিন ধরে গনজাইপুর ইউনিয়নের রামলোহ এলাকার একটি মাদ্রাসার পিছনে উচু একটি টিলা থেকে অবাধে মাটি কেটে ট্রাকে করে প্রতিনিয়ত বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অবগত করা হলেও তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। শনিবার বিকেল ৩ টার সময় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মাটি কাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার লোকজন।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউণ গণি ওসমানী বলেন, পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় তহসিলদারকে সরেজমিনে গিয়ে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন এখনো প্রতিবেদন দেয়নি তহসিলদার, তবে খোঁজ নিয়ে দেখছেন যদি কেউ মাটি কেটে বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গনমাধ্যমে দিনারপুর অঞ্চলের পাহাড় কাটার সংবাদটি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজিকে বলে দিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা