আবারও জাতীয় লকডাউনের সামনে ব্রিটেনঃস্কুল খোলার ব্যাপারে সতর্কতা

মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, লন্ডনঃ বিশেষ আক্রমনের বৈশিষ্ট নিয়ে আবির্ভূত হবার কারণে ব্রিটেনে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমন। এ অবস্থায় স্কুল খোলার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার সতর্কতা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জাতীয় ভাবে ফের লকডাউনের ভাবনা চলছে বলেও জানা গেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়া থামাতে আরেক দফা ন্যাশনাল লকডাউন অত্যন্ত প্রয়োজন বলে সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্ঠারা সতর্ক করে দেয়ার পর মন্ত্রীরা আগামী সপ্তাহে স্কুল খুলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনা শুরু করেছেন।
এডুকেশন সেক্রেটারী, গ্যাভিন উইলিয়ামসন ইয়ার ১১ ও ১৩ (শিক্ষাবর্ষ) এর পাশাপাশি প্রাইমারী স্কুলগুলো ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার হলিডে শেষে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ি পুণরায় খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন।

তবে, ভাইরাসের নতুন ধরন বা স্ট্রেনের বিস্তার দেখে মন্ত্রীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ক্রিসমাসের দিন কয়েক আগে বিজ্ঞানীদের গ্রুপ ‘সেইজ’ এর পক্ষ থেকে মন্ত্রীদের বলা হয়েছিলো যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্কুল বন্ধ রাখাসহ তৃতীয় দফা জাতীয় লকডাউনের প্রয়োজন হতে পারে।
তারা এমন কী এ-ও বলেছিলেন যে, তৃতীয় দফা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন জারি করেও ভাইরাসের সংক্রমণের গতি কমিয়ে আনা এবং হাসপাতালগুলোতে রোগির উপচে পড়া চাপ বন্ধ করা সম্ভব না ও হতে পারে।

সরকারের এক মুখপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি টাইমস এর এক রিপোর্টে বলা হয়, স্কুল খোলে দেয়ার বিষয়টি এখন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। মুখপাত্র বলেছেন, “যেহেতু শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য স্কুল হচ্ছে সেরা স্থান, তাই আমরা চাই প্রতিটি ছাত্রছাত্রী যেন জানুয়ারিতে ফিরে যায় স্কুলে। তবে প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, আমরা যেহেতু এখন মহামারীর পথটি অনুসরণ করছি, তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়মিত পর্যালোচনা করে যাওয়া দরকার।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম টিচিং ইউনিয়ন এনএএসইউডব্লিউটি এর পক্ষ থেকে স্কুল খোলার বিষয়টি বিলম্বিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ‘যে এলাকাগুলো সর্বোচ্চ বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছে, সেখানকার সকল শিক্ষার্থীর জন্য ভার্চুয়্যাল শিক্ষণ’ এর ওপর নজর দেয়ার জন্য এডুকেশন সেক্রেটারির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের বাচ্চা এবং যেসক বাচ্চা অসহায় হিসেবে চিহ্নিত তাদেরকে এই ব্যবস্থার বাইরে রাখা যেতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে এনএএসইউডব্লিউটি এর জেনারেল সেক্রেটারি, প্যাট্রিক রোচ লিখেছেন, স্কুল ও কলেজগুলো স্প্রিং টার্মের শুরু সময় বিলম্বিত করা হলে সকল স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ি প্রয়োজনীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন ও নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যের কোভিডের প্রেক্ষিতে নতুন ধরনের নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রকাশ করার জন্য এবং স্কুলের ভেতরে মাস্ক বাধ্যতামূলক এবং স্কুল স্টাফদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
কেবিনেট অফিস মিনিস্টার, মাইকেল গভ বলেছেন, এখন পর্যন্ত আগের পরিকল্পনা অনুযায়ি জানুয়ারির প্রথমেই প্রাইমারী স্কুল এবং সেকেন্ডারি স্কুলের ইয়ার ১১ ও ১৩ এর সকল শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরে যাবে। সেকেন্ডারি স্কুলের বাকী শিক্ষার্থীরা ফিরবে পরের সপ্তাহে।

তবে তিনি বলেছেন, সামগ্রিক বিষয় আমরা রিভিউ করছি। আগামী ২৪ কিংবা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমরা হেড টিচার ও টিচারদের সাথেও এ নিয়ে কথা বলবো।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস আগেরটির তুলনায় অনেক বেশি সহজেই বাচ্চাদের সংক্রমিত করতে পারে। সেইজ গ্রুপের পক্ষ থেকে মন্ত্রিদের বলা হয়েছে যে, নভেম্বরের মতো নাশ্যানাল লকডাউন, যখন স্কুলগুলো খোলা রাখা হয়েছিলো, তা যথেষ্ট নয়। এমন কি, মার্চ এর সময়কার মত জাতীয় লকডাউন দেয়া হলেও তা অপর্যাপ্ত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা