ইনাতগঞ্জের গৃহবধূ সুজনা খুনের ক্লু উদঘাটন

মতিউর রহমান মুন্না::পরকিয়া প্রেমের সর্ম্পক রয়েছে এমন সন্দেহে তাকে হত্যা করেছে ঘাতক প্রেমিক সাহিন। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে। হত্যাকান্ডটি সে নিজে একাই করেছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের প্রায় দেড় মাসের মাথায় গ্রেফতার করা হয় মূল ঘাতক সাহিনকে। গত রোববার তাকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। এ ব্যাপারে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭ টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জের কক্ষে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

সহকারী পুলিশ সুপার (নবীগঞ্জ-বাহুবল) সার্কেল পারভেজ আলম চৌধুরী জানান, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের তোলাফর উল্লার মেয়ে সুজনা বেগম চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর সন্ধা ৫টা ৪০ মিনিটে তার খালার বাড়ী সৈয়দপুর দাওয়াতে যাবার পথে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও তার কোন সন্ধান না পেয়ে নিখোঁজের ৪ দিন পর অর্থাৎ ৪ নভেম্বর নবীগঞ্জ থানায় সাধারন ডায়েরী করেন নিখোঁজের পিতা। এরপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে তৎপরতা চালায় পুলিশ। গত শনিবার বিকেলে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের কৈখাইড় গ্রামের ইলিমপুর হাওরে ধান কাটতে গিয়ে একটি কংকাল দেখতে পায় ধান কাটার শ্রমিক। এ সংবাদটি পুলিশকে জানানো হয়।

খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (নবীগঞ্জ-বাহুবল) সার্কেল পারভেজ আলম চৌধুরী, থানার ওসি তদন্ত গোলাম দস্তগীর আহমেদ, ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক সামছুউদ্দিন খাঁন একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মাথার খুলি, হাড়, চুল, ওড়না ও সেলোয়ার কামিজসহ পরনের কাপড় উদ্ধার করেন। এ সময় সুজনার পিতা তোলাফর উল্লাহসহ পরিবারের লোকজন ওড়না ও সেলোয়ার কামিজ দেখে হাড়গুলো সুজনার বলে সনাক্ত করেন। সন্ধ্যায় একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে কৈখাইড় গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন এর পুত্র সাহিন মিয়াকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করেন।

প্রেস বিফ্রিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (নবীগঞ্জ-বাহুবল) সার্কেল পারভেজ আলম চৌধুরী পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সাহিনের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, সুজনার সাথে সাহিন মিয়ার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এ অবস্থায় অন্যত্র এক সৌদি প্রবাসীর সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঔরষে ৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এমনকি প্রেমিক সাহিনও বিয়ে করেছেন। তারও রয়েছে দুই সন্তান। কিন্তু সুজনার স্বামী প্রবাসে অবস্থান করায় থেমে থাকেনি তাদের প্রেমের সর্ম্পক। বিয়ের পরও গভীরভাবে দুজনের মধ্যে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো।

প্রায় সময়ই সাহিন প্রেমিকা সুজনাকে আর্থিক সহায়তা করতো। কিন্তু সুজনা বেগমের অন্য ছেলের সাথেও পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল যা নিয়ে সন্দেহ করতো অপর পরকিয়া প্রেমিক সাহিন। এ ঘটনাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা সাহিন। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর সুজনা তার খালার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সময় সন্ধায় প্রেমিক সাহিনকে ফোন দেয়। তার মেয়ের নাকে দাগা দেবে এ জন্য সাহিনের কাছে ৪ হাজার টাকা চায় সুজনা। এ কথা বলার পর সাহিন সুজনার বাবার কাছে ৪ হাজার টাকা দেয়। রাত ৮ টার সময় সাহিন সুজনাকে ফোন দিয়ে জানতে চায় সে কোথায় আছে।

জবাবে সুজনা জানায় সে তার খালার বাসায় আছে। এর আধা ঘন্টা পর আবার ফোন দিলে গাড়ীর আওয়াজ শুনতে পায় সাহিন। গাড়ী দিয়ে কোথায় যাচ্ছো? সাহিনের এমন প্রশ্নের জবাবে সুজনা বলে সে পাশের গ্রাম ফরিদপুরে যাচ্ছে তার সাথে এক ছেলে রয়েছে। এরপর থেকে সাহিনের সন্দেহ আরো ঘনিভূত হয়। এ সময় সাহিন সুজনাকে বলে তার সাথে দেখা করতে। এরই প্রেক্ষিতে ওইদিন রাত ১০ টার দিকে দুজনের দেখা হয়। পরকিয়া প্রেমিক-প্রেমিকার কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সাহিন সুজনার কানে ও গালে ২/৩ টি থাপ্পর মারে। থাপ্পরের সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যায় সুজনা।

এতে ভয় পেয়ে যায় সাহিন। সে পানি এনে নাকে মূখে ও মাথায় দিলেও জ্ঞান ফিরেনি সুজনার। প্রায় আধা ঘন্টা চেষ্টা করেও জ্ঞান ফেরাতে পারেনি সুজনার। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সে সুজনাকে কাদে করে নিয়ে পার্শ্ববতী ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে কাদা মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়। হত্যাকান্ড সে একাই করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। প্রেস বিফ্রিংয়ে এমনটাই দাবি করেন সহকারী পুলিশ সুপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা