নবীগঞ্জের সাংবাদিক জুনাইদ হত্যার মামলার রায় ৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা

মো: সরওয়ার শিকদার:: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় উদিয়মান তরুন সাংবাদিক জুনাইদ আহমেদ হত্যা মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ২ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
গতকাল সামবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা এগারটায় এই রায় ঘোষণা করেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নাসিম রেজা। দন্ডপ্রাাপ্তরা হলেন- উপজেলার সাতাইল গ্রাামের বাবুল মিয়ার ছেলে বাদশাহ মিয়া (৪০), দেবপাড়া গ্রামের হাছিল মিয়ার ছেলে রাহুল মিয়া (৩৫) ও সাতাইহাল মাজপাড়া গ্রামের আব্দুল রেজাকের ছেলে লন্ডনের ওল্ডহামের হাল শহরে বর্তমানে অবস্থান ফরিদ মিয়া (৩৮)। রায় ঘোষণার সময় বাদশাহ ও রাহুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে পলাতক রয়েছেন ফরিদ মিয়া। মামলার অপর আসামী মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জনতার গণপিঠুনিতে নিহত হয়।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক, এডভোকেট আজিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও দুইদিন দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শেষে সোমবার বিচারক রায় ঘোষনা করেন। এ সময় মামলার বাদী মোজাহিদ আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং লন্ডনে পলাতক থাকা ফরিদ মিয়াকে দেশে এনে রায় বাস্তবায়নের দাবী জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত ও পিপি এডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক বলেন, রাষ্ট্র পক্ষ এই রায়ে খুশি। এতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অপরাধীরা অপরাধ করতে সাবধান হবে।
প্রসঙ্গত,২০১২ সনের ১০ জুলাই সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ওই রাতেই দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশের আলামত নষ্ট করার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ রেল লাইনে ফেলে রাখে। পরদিন ১১ জুলাই সকালে সাংবাদিক জুনাইদ আহমদের মৃতদেহ প্রায় ২০ টুকরা অবস্থায় রেলওয়ে পুলিশ উদ্ধার করে। ঘটনার শুরুতেই জুনাইদ আহমেদের পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করে আসছিল। এক পর্যায়ে জুনাইদের ভাই মোজাহিদ আহমদ বাদী হয়ে হবিগঞ্জের আদালতে একই গ্রামের ফরিদ মিয়াকে প্রধান আসামী করে ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি এফআইআর গণ্যে রুজু করার জন্য জিআরপি থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার খবর পেয়েই প্রধান আসামী ফরিদ ইংল্যান্ডে পালিয়ে যায়। অপর আসামীরাও আত্মগোপন করে। এদিকে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় জুনাইদের পরিবার তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে উক্ত হত্যাকান্ডের বিচার ও আসামীদের গ্রেফতারের আবেদন করেন। মন্ত্রী এক মাসের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট পুলিশকে নির্দেশ দিলেও কোন ফল হয়নি। এক পর্যায়ে নিহত জুনাইদের পরিবারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাহুবল থেকে পুলিশ মামলার ২নং পলাতক আসামী আব্দুল হামিদকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পরে রেলওয়ে পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করে তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে নিয়ে ওই কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের কোন প্রকার ক্লু উদঘাটন না করে আসামীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জুনাইদের পরিবার বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি সোহরাব হোসেন এর নিকট অভিযোগ দিলে তিনি নিহত সাংবাদিকের পরিবারকে শাস্তনা দিয়ে এই হত্যাকান্ডের বিচারের আশ্বাস প্রদান করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইজি সোহরাব হোসেন শায়েস্তাগঞ্জে পৌঁছেন। তিনি এ সময় বলেন-সাংবাদিক জুনাইদ আহমদ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কারো সাথে আপোষ হবে না। প্রয়োজনে সংঘবদ্ধভাবে পলাতক আসামীকে আটক করে পুলিশকে জানানোর জন্য সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। এ মামলার প্রধান আসামী ফরিদ লন্ডনে পলাতক, অপর আসামী বাহুবলের মাদক সম্রাট আব্দুল হামিদকে স্থানীয় জনতা আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। প্রায় বছর খানেক জেল খেটে বের হলে স্থানীয় লোকজন তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে পেলেন। ৩য় আসামী বাদশা ৬মাস জেল কাটার পর জামিনে মুক্তি পায়। ৪র্থ আসামী রাহুলও ৬ মাস জেল কাটার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা