মৌলভীবাজার সংবাদদাতা::সাবেক গণপরিষদ সদস্য, সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ, বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা,বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আলহাজ্ব আজিজুর রহমানের দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে।মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র:) টাউন ঈদগাহ মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কয়েক হাজারা মানুষের উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। তার আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

জানাজার নামাজ পূর্বে তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমানের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, মরহুমের ছোট ভাই জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. জামাল উদ্দিন।

তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু মুক্তিযদ্ধকালীন সময়ে একাধিকবার পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পাক হানাদারদের হাতে নির্যাতনের শিকার একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অন্যতম রসদ সরবরাহকারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করা হয়।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুইবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ দল ও মহাজোটের সমন্বয়কারী ছিলেন।

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে মনোনীত হন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক।
২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনমূলে মৌলভীবাজারে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন আজিজুর রহমান।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত: মঙ্গলবার ১৮ আগস্ট রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)। ঢাকা থেকে দূপুরে তার লাশ নিজবাড়ি সদর উপজেলার গুজারাইয়ে পৌঁছায়। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৫ আগস্ট তিনি বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি হন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীনবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রিয় এ নেতাকে এক নজর দেখতে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক ও শুভাকাঙ্খীরা ছুটে আসেন তার বাড়িতে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় তার কর্মস্থল জেলা পরিষদে মরদেহ নেয়া হয়। লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।