নবীগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে হত্যার চেষ্টা, আটক ১

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)সংবাদদাতা:নবীগঞ্জে ছাত্রলীগের ক্যাডার বহিরাগত বখাটে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাত ও হামলায় নবীগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদসহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে। আহতদের মাঝে ২ জন’কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। অপর আহত কলেজ ছাত্রী চৈতী (১৮)কে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রায় ২ ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তোলে নেয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই হামলাকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিপন আহমেদ মুন্না মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার সহযোগী হুমায়ুন কবির নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। অধ্যক্ষকে রক্ষা করতে গিয়ে কলেজের দপ্তরি ফয়জুর রহমান আহত হয়েছে। তাকেও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।


কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার মদনপুর গ্রামের নুরুজ্জামান ফারুকীর বখাটে ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিপন আহমেদ মুন্না প্রায়ই কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো । এরমধ্যে ২য় বর্ষের ছাত্রী চৈতীকেও। গত সোমবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী মুন্না উক্ত কলেজ ছাত্রীর সাথে জোরপুর্বক মোবাইলে সেলপি ছবি তোলে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেনের নিকট অভিযোগ দিলে অধ্যক্ষ ঘটনার বিষয়ে মুন্নার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। পরে মুন্নার পরিবার ওই কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করে বিকালে অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে যান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নবীগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজে অর্নাস পরীক্ষা হলে পরিদর্শনে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী মুন্না ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যার উদ্দ্যেশে কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদের গলায় ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় অধ্যক্ষ’কে বাচাঁতে কলেজ দপ্তরী কলেজ পাড়া এলাকার মজিদ উল্লার ছেলে ফয়জুর রহমান এগিয়ে আসলে সেও ছুরিকাঘাতের শিকার হয়। এ সময় পরীক্ষা হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসলে মুন্না দ্রুত মটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। তবে তার সহযোগী একই গ্রামের জলফু মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবির’কে আটক করে পুলিশের নিকট সোর্পদ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা কলেজের সামনের রাস্তায় ব্যারিকেট দিলে প্রায় ২ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে রাস্তার উভয় পাশে যানবাহন আটকা পরে যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সাথে পুলিশ প্রশাসনের আলোচনার প্রেক্ষিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তোলে নেয়া হয়। পরে সন্ত্রাসী মুন্নাকে গ্রেফতারের দাবীতে এবং অধ্যক্ষের উপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে মিলিত হয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, প্রভাষক ফজলে এলাহী ফরহাদ, প্রর্দশক দুদু মিয়া প্রমূখ। তারা বলেন, নবীগঞ্জের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। সন্ত্রাসী মুন্না অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদকে প্রাণে হত্যার উদ্দ্যেশেই ছুরিকাঘাত করেছিল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে বেচেঁ গেলেও তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে বাচাঁতে গিয়ে কলেজ দপ্তরী ফয়জুর রহমানের হাতের রগ কেটে গেছে। তারা বলেন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসী মুন্নাকে গ্রেফতার না করলে বুধবার ১২ টার পর থেকে কঠোর কর্মসুচী নিয়ে রাস্তায় নামবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এ সময় নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ এসএম আতাউর রহমান, এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুন্নাকে গ্রেফতারের আশ^াস দিয়ে সকলের সহযোগিতার দাবী জানান। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ – বাহুবলের সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু, পৌর মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু, পৌর সভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ আহত অধ্যক্ষকে দেখতে হাসপাতালে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা