নোয়াখালীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৩১ বার তোপধ্বনি, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও খেলাধুলা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা-বীরাঙ্গনা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস।

সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর জেলা শহরের বিজয় মঞ্চ সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস ও পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।

পরে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নোয়াখালী ইউনিট, জেলা আওয়ামী লীগ, নোয়াখালী প্রেসক্লাব, নোয়াখালী পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, স্বাচিপ, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সদর উপজেলা প্রশাসন, জেলা আইনজীবি সমিতি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছন।

সকালে জেলা শহরের প্রধান সড়কে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ।

সকাল ৯টায় নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার, বিএনসিসি, স্কাউট, গালর্স গাইড, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন, সালাম ও অভিবাদন গ্রহন করেন।

বিকাল ৩ টায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন দল ও দলের অঙ্গসংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।

????????????????????????????????????

এদিকে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উদযাপন করা হয়। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যেগে র‌্যালি, আলোচনা সভা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনসমূহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরষ্কার বিতরণী ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিবসটি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ভোজের আয়োজন করে।

সকাল ৯.০০টায় নোবিপ্রবি পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে, উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলমের নেতৃত্বে বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মূলফটকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ, চেয়ারম্যানবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক সমিতি ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ স্ব স্ব সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. মমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম। অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন, নোবিপ্রবি’র কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মো. মহসীন, প্রক্টর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আফসানা মৌসুমি, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস অফিসের পরিচালক এ এইচ এম নিজাম উদ্দিন চৌধুরি, কর্মচারীদের পক্ষে মোঃ সোহরাব হোসেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে নজরুল ইসলাম নায়েম। এসময় অনুষদসমূহের ডিন, ইনস্টিটিউট ও দপ্তরসমূহের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক সমিতি ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা নেতৃবৃন্দ ও কর্মচারীবৃন্দ এবং ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয় স্বাধীন একটি ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখা। এরপর ৬৯ এর গণঅভূত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান বিজয় দিবসের এদিনে জাতির পিতাসহ পঁচাত্তরে শহিদ হওয়া তার পরিবারের সদস্যদের কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করি। মহান বিজয় দিবস সাফল্যম-িত হোক।

তিনি আরো বলেন, অনেক ত্যাগ আর বিসর্জনের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এটি অটুট রাখতে হলে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ হবে। তার কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।উল্লেখ্য, বিজয় দিবসকে আনন্দমুখর করে তুলতে আজ ১৬ই ডিসেম্বর দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহান বিজয় দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার দিনব্যাপি কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর রাত ১১.৫০ মিনিটে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শহীদ মিনারে কালো ব্যাজ ধারণ করে নিষ্প্রদীপ মহড়া ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০১৯) নোবিপ্রবির শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর ২০১৯) নোবিপ্রবি’র প্রশাসনিক ভবন, অডিটোরিয়াম, প্রধান ফটক ও একাডেমিক ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা