বাংলাদেশের প্রশংসায় ও জয় বাংলায় মূখড়িত ছিলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে

মকিস মনসুর::বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে  বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের সতস্ফুত অংশগ্রহণে ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অর্ধশতাধিক  এমপি ও বৃটিশ মন্ত্রীদের নিয়ে.উপস্থিতে  গত ২৭ মার্চ বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ট্রেরিজ প্রেভিলিয়ানে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের আয়োজিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের পোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে.। ঐদিন একদিকে  ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুশন নিয়ে চলছিলো এমপিদের জমজমাট ডিভেইট.অপরদিকে  বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রশংসায় ও জয় বাংলায় মূখড়িত ছিলেন সর্বদলীয় ব্রিটিশ রাজনীতিকরা। এযেনো এক নব ইতিহাসের সূচনা.।  যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ এর সভাপতিত্বে এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও  কাউন্সিলার সায়মা আহমদ এর  পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই পোগ্রামে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম. বৃটেনে  বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম ছাড়া ও ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  স্টিফেন টিমস এমপি, জিম ফিজ পেট্রিক এমপি, পল স্ক্যালি এমপি, স্যান্ডি মার্টিন এমপি, জনাথন এ্যাসওর্থ এমপি, সিমা মালহোত্রা এমপি, টেরি লয়ড এমপি, জেস ফিলিপ এমপি, জুলিয়ান নাইট, ওয়েস্ট স্ট্রিটিং এমপি রাইট অনারেবল নিক ব্রাউন এমপি জেসিকা মর্ডান এমপি. জো স্টিফেন এমপি.রাইট অনারেবল জেরান্ট ডেভিস এমপি  সহ ব্রিটিশ পার্লামেন্টর অর্ধ শতাধিক এমপি। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রশংসায় করেছেন সর্বদলীয় ব্রিটিশ রাজনীতিকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশ তাক লাগানো সফলতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য। তাঁরা বলেন, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মানবিকতার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজনে উপস্থিত হওয়া অধিকাংশ এমপি জয়বাংলা এবং বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভুয়সী প্রশংসা করে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে স্বাধীনতার ৪৮তম উদযাপনে আনন্দ প্রকাশ করেন।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশের নানা উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পরিসংখ্যান তুলে ধরা সহ  যুক্তরাজ্যকে আরও বেশি বেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটা সময় ব্রিটেনের এইডের উপর নির্ভরশীল ছিলো এখন বাংলাদেশ সেই নির্ভরতা কাটিয়ে ব্রিটিশ ট্রেডকে প্রাধান্য দিচ্ছে এটি বতর্মান প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য বলেই স্বীকার করেছেন ব্রিটিশ এমপিরা। অনুষ্ঠানে  যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে। বাঙালিরা মুসলিম হলেও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। মৌলিক সেই পার্থক্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ একটি ধরনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতিকদের এখন নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে; নাকি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে ফিরে যাওয়া সমর্থন করবে। হাইকমিশনার ব্রিটিশ রাজনীতিকদের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের প্রশংসা করলে চলবে না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে- সেটিই হবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের উপযুক্ত জবাব।
গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পদচলা অব্যাহত থাকার প্রশংসা করে ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তাঁরা বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির প্রধান অ্যান মেইন বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘণিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা ভাবছে ব্রিটিশ সরকার। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এই আইনপ্রণেতা বলেন, কিছুদিন আগেই তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। চলতি বছরের মধ্যেই আবার যাবেন।
বিরোধী দল লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা জেস ফিলিপস বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তিনি কাজ করছেন বলে জানান। শিঘ্রই তাঁর বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা আছে।
অন্যান্যদের মধ্যে ভ্যালেরি ভাজ, মাইক গেইফস, টেরি লয়েড, পল স্কালি, জনাথন অ্যাশওয়ার্থ সহ বিভিন্ন ব্রিটিশ রাজনীতিক বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশংসা করেন। কেউ কেউ বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে প্রশংসা করেন। লেবার দলের আইনপ্রণেতা টবি লয়েড বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত সকলে সমস্বরে গেয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত। ছিল দেশাত্ববোধন গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা।
ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের হাতে বাংলাদেশে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পরিসংখ্যান সহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তথ্য সম্বলিত প্রকাশণা সহ উপহার তুলে দেয়া হয়েছে..।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা