রোদ না উঠায় হবিগঞ্জের ভাটি এলাকার হাওরে শত শত মণ ধান পঁচে যাচ্ছে-

এসএম সুরুজ আলী, হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জের ভাটি এলাকায় ধান কাটা শেষ হলেও লাগাতার বৃষ্টির কারণে খলায় জমে থাকা ধান শুকাতে পারছেন না কৃষকরা। এতে পবিত্র মাহে রমজানে ধান শুকানো নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন কৃষকরা। অনেক সময় একটু রোদ দেখলেই কৃষকরা যখন খলার মধ্যে কিংবা প্লাষ্টিকের ত্রিপালের মধ্যে ধান শুকাতে দেন এর কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি শুরু হয়। এতে আবারও কৃষকদের ধান একত্রিত করতে হচ্ছে। অনেক সময় বৃষ্টি দ্রুত আসার কারণে কৃষক কৃষাণীরা ধান একত্রিত করতে করতে গিয়ে ভিজে যায়। এমতাবস্থায় ধান নিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন কৃষকরা।

সূত্র জানায়, গত বছর অকাল বন্যায় কৃষকদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এবার জেলায় কৃষকরা ১ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেন। জমিগুলোতে বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটতে গিয়ে কৃষকরা শ্রমিক সংকটে পড়েন। এই সংকট নিরসন করে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেন।

পরবর্তীতে টানা বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে খলা ও বাড়িতে জমা করেন। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে পানি জমে অনেক কৃষকদের খলাই পানিতে তলিয়ে যায়। যাদের খলা তলিয়ে যায় তারা ধানগুলো সড়ক ও বাড়িতে নিয়ে তুলেন। বৃষ্টির জন্য ধান শুকাতে না পাড়ার কারণে ধানগুলো পচঁনের হাত থেকে রক্ষার জন্য অনেক কৃষক বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলে রাখেন। এর মধ্যে মাঝে মাঝে রোদ উঠায় কৃষকরা কিছু ধান শুকাতে পারেন।

কিন্তু রমজানের শুরুতেই বৃষ্টি হাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান শুকাতে পারছেন না। রমজান মাসে অনেক কৃষক কৃষাণীরা রোজা রেখে ধানের কাজ করছেন। যাদের জমির ধান কাটা রয়েছে, তাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ও শ্রমিকদের রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ আবার রোজা রাখতেও পারছেন না।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সুবিদপুর, আতুকুড়া, সুনারু গ্রামের কৃষকদের ধান বিভিন্ন খলার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা রোদের জন্য ধান শুকাতে পারছেন না। আতুকুড়া গ্রামের কৃষক আলকাছ মিয়া জানান, তার খলার মধ্যে ৩শ’ মণ ধান কাঁচা রয়েছে। কিন্তু রোদ না উঠায় ধানগুলো শুকানোতে পারছেন না।

তিনি বলেন- খাবারের জন্য কোন ধান সিদ্ধ দিতে পারছি না। আরো ১২ কের জমির ধান কাটার বাকি রয়েছে। একই গ্রামের কৃষক আজম আলী জানান, ১শ’ মণ ধান খাবারের জন্য সিদ্ধ দিয়েছিলাম। কিন্তু রোদ না উঠার কারণে সেগুলো শুকাতে পারছি না। কাঁচা ধান বিক্রি করতে গেলেও পানির মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। শুকনো ধান বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। খলার মধ্যে জমে থাকা অনেক ধান পঁচে যাচ্ছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ জেলার ৯৭ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হবিগঞ্জ সদরসহ উচু এলাকার কিছু জমি কাটার বাকি রয়েছে। কিন্তু কাটা জমিগুলো থেকে কৃষকরা ৬০ ভাগ উত্তোলন বা শুকাতে পেরেছেন। বাকি ধানগুলো রোদের জন্য শুকাতে পারছেন না। আমরা আশা করি রোদ হলে ধানগুলো শুকাতে পারবেন।

অপরদিকে যে কৃষকদের ধান কাটা শেষ হয়েছে, তারা এখন খড় বাড়িতে তুলছেন। কিন্তু ধান রক্ষা করতে গিয়ে কৃষকরা জমি থেকে সেভাবে খড় কেটে আনেননি। যে কারণে আগের তুলনায় অনেক কম খড় পাচ্ছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় গো-খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন কৃষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ জাতীয় আরো খবর..

ফেসবুকে আমরা